আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এমনটা ধরেই দলীয় প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে রুদ্ধদ্বার আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও মনোনয়ন বাণিজ্য করার জন্য হলেও বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। সেভাবে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পাশাপাশি সামনে আরো নাশকতা হতে পারে বলে সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরে আরো ঝামেলা করতে পারে। এমনকি নির্বাচনের পরেও নাশকতা করার চেষ্টা করা হতে পারে। এজন্য নেতাকর্মীদের আরো সক্রিয় ও সজাগ থাকতে হবে।
একই সঙ্গে বিদেশি কূটনৈতিকদের বিষয়ে কম কথা ও অশোভন বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, তারা তাদের কাজ করুক, আমরা আমাদের কাজ করবো। তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলে পাঠাক; যা বলছে বলুক; কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক রাত প্রায় সোয়া ৯টা পর্যন্ত চলে। নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার বৈঠকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। তবে কমিটির কো-চেয়ারম্যানের পদটি কাকে দেয়া হবে তা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দলীয় সভাপতিকে দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আইন, অর্থ, দফতর, প্রচার-প্রকাশনাসহ নির্বাচনকালীন ১৪টি উপকমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। দলের নেতাদের সঙ্গে বসে এসব উপকমিটি গঠনের দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দুইটি করে চারটি ও বাকি ছয় বিভাগের জন্য ছয়টিসহ মোট ১০টি বুথ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রক্রিয়া চালানো হবে। অফলাইন ও অনলাইন দুই প্রক্রিয়াতে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এমন বক্তব্য দিলে তাকে থামিয়ে দিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে হবে। বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
বক্তৃতায় হরতাল ও অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস এবং লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, যারা আগুন সন্ত্রাস করবে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচির সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুলিশ হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে হামলা এসব যারা করলে তাদের আটক করা হবে না তো কী করা হবে? যারা এসব সন্ত্রাস করবে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেতনভাতা বৃদ্ধির জন্য পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাকশ্রমিকদের মজুরি দফায় দফায় বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবার ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। শতকরা ৫৬ ভাগ মজুরি বাড়ানো হয়েছে। অথচ আন্দোলনের নামে ১৯টি কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে। যারা তাদের (শ্রমিকদের) উস্কানি দিচ্ছে, তারাই তাদের ধ্বংস করবে। এটা শ্রমিকদের বুঝতে হবে। বর্তমান মজুরি নিয়েই পোশাকশ্রমিকদের কাজ করতে হবে।
বৈঠক শেষে গণভবনের গেটের সামনে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিষয় নিয়ে কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের সভাপতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের যে আটটি বিভাগীয় কমিটি আছে তাদেরকে আরো সক্রিয় হয়ে প্রত্যেক বিভাগে, জেলায় গিয়ে এই সতর্ক পাহারার বিষয়টা আরো জোরদার করতে বলা হয়েছে।
ওবায়দুল বলেন বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন দল ও সরকার। আমাদের উচিত দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও রক্ষা করা। কাজেই সরকার হিসেবে, সরকারি দল হিসেবে আমাদের যার যেখানে দায়িত্ব, আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার, আমরা জনস্বার্থেই সারাদেশে সতর্ক পাহারায় আছি ও থাকবো।
বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, এএইচএম খায়রুজ্জামন লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মির্জা আজমসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন।
স্বাআলো/এসএ