ক্ষমতার অপব্যবহার, রায় জালিয়াতি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন যুগ্ম কমিশনার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সকাল ৮টার কিছু পর ডিবির একটি দল ধানমন্ডিতে খায়রুল হকের বাসায় অভিযান চালায় এবং তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় জালিয়াতি। অবসরে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দেওয়া ওই রায়ে তিনি দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নান্নু গ্রেফতার
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর খায়রুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের নিযুক্ত আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের হতে থাকে। গত বছর আগস্টে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আদালতে তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ বি এম খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনটি তাকে “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারিগর” হিসেবে আখ্যায়িত করে।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এবং অবসরের পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য খায়রুল হক ব্যাপক সমালোচিত হন। তার বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতির পদ লাভ, সরকারের পক্ষে রায় দেওয়া এবং ট্রাস্টি তহবিলের অর্থ ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে দেয়া রায়, হাইকোর্টের আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের রায় দিয়েও তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যান।
স্বাআলো/এস
