পৌরসভায় অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন দফতররে অভিযোগ

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি: জেলার বানারীপাড়া পৌরসভায় ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ডে জালিয়াতি করে বয়স কমিয়ে দুইটি পদে চাকরি নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়েছে। জনস্বার্থে বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ও বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শাহিন রবিবার (১৪ জুলাই) স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব,দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান,সচিব ও বরিশালের পরিচালক,বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে এ লিখিত অভিযোগ করেন।

বানারীপাড়া প্রেসক্লাবে যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শাহিন বানারীপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের ছেলে। বিভিন্ন দফতরে দেয়া ওই অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, জালিয়াতি করে বয়স কমিয়ে পৌরসভায় পাম্প চালক পদে শ্যামল শীল ও নৈশ প্রহরী পদে তাজুল ইসলাম চাকরি নিয়েছেন। অভিযুক্ত তাজুল ইসলামের বর্তমান বয়স ৪৯ বছরের অধিক। চাকরিতে যোগদানের সময় (২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর) তার বয়স ছিলো ৪৮ বছর ৯ মাস ১৫ দিন। কিন্তু দেখিয়েছেন ৩০ বছর ১১ মাস ২৫ দিন । অভিযুক্ত শ্যামল শীলের বর্তমান বয়স ৩৭ বছরের অধিক। চাকরি নেয়ার সময় তার প্রকৃত বয়স ছিলো ৩৬ বছর ছয় মাস ২৪ দিন। কিন্তু ৩০ বছর দুই মাস ২৫ দিন দেখিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে ১৮-৩০ বয়স সীমা নির্ধারিত থাকলেও জালিয়াতির পরেও তাদের বয়স সঠিক ছিলনা। এছাড়া নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়নি। ওই পদে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আবেদনকারী ছিলেন। তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মণকাঠি গ্রামের মৃত আছমত আলী বেপারীর ছেলে এবং শ্যামল শীল একই ইউনিয়নের মাছরং গ্রামের কালাচাঁদ শীলের ছেলে।

এদের মধ্যে তাজুল ইসলামের নাম,ঠিকানা ও বাবা-মায়ের নাম একই থাকলেও ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্ড অনুযায়ী তার তিনবার জন্ম হয়েছে। ভোটার তালিকা অনুযায়ী তাজুল ইসলামের প্রথম জন্ম তারিখ ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় ভোটার তালিকায় তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বর । তৃতীয়বার সংশোধন করে তাজুল ইসলাম তার জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ১ ডিসেম্বর । একজন মানুষের তিনটি জন্ম তারিখ নিয়ে জনমনে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়া শ্যামল শীলের নামেও দুইটি এনআইডি কার্ড পাওয়া গেছে। অর্থ্যাৎ তিনিও দুই বার ধরণীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার প্রথমটির জন্ম তারিখ. ১৯৮৭ সালের ২ মে । তার দ্বিতীয় এনআইডিতে তিনি জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন ১৯৯২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ।

দুইটি এনআইডি কার্ডে তার,বাবা ও মায়ের নাম অভিন্ন থাকলেও ঠিকানা ভিন্ন। প্রথমটিতে ঠিকানা বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের মাছরং গ্রাম ও দ্বিতীয়টিতে বানারীপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার বাড়ি রোড দেখিয়েছেন। সম্প্রতি বয়স জালিয়াতি করে চাকরি নেয়ার বিষয়ে তথ্য প্রমান প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় একই নিয়োগে পাইপ লাইন মেকানিক পদে পৌরসভার মেয়র অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তার আপন ভাইয়ের ছেলে অমর শীলকে চাকরি দিয়েছেন। তাজুল ইসলাম বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীলের ব্যক্তিগত সিএনজি গাড়ি চালক হওয়ায় মেয়রের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের সুযোগে তাজুল ইসলাম সিএনজি গাড়ি চালানোর পাশাপাশি নৈশ প্রহরী পদে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল এবং সদস্য সচিব ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন আকতারসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সদস্যরা অবৈধভাবে লাভবান হয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বয়স জালিয়াতির করে এসব চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে একই চক্র পৌরসভায় একইভাবে আরো কয়েকটি পদে কর্মচারী নিয়োগের জন্য স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছেন। অথচ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রায় দেড় কোটি টাকা বেতন-ভাতা ও প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।

এদিকে দেশের অন্যসব জনপ্রতিনিধি দিনে অফিস করলেও ব্যতিক্রম বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে দুই মেয়াদে নির্বাচিত পৌরসভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল দিনভর বরিশাল আদালতে তার আইনী ব্যবসায় ব্যতিব্যস্ত থেকে গত ৮ বছরের অধিক সময় ধরে রাতে অফিস করায় কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ পৌরবাসীকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মেয়র প্রতিদিন সাঝের বেলায় পৌরভবনে এসে রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত অফিস করে আবার বরিশালের বাসায় ফিরে যান। পৌরসভার বয়স্ক ও নারী নাগরিকদের রাতে মেয়রের কাছে কোন কাজে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। পৌরসভার নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শফিকুল ইসলাম শাহিন জনস্বার্থে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সচেতন নাগরিক হিসেবে পৌরসভায় কর্মচারি নিয়োগসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় ও দুদকসহ বিভিন্ন দফতররে এ অভিযোগ করেছেন বলেন জানান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন আকতার কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, নিয়োগসহ যা কিছু হয়েছে সব বিধিসম্মতভাবে হয়েছে, কোন অনিয়ম হয়নি। বরিশাল ও ঢাকায় প্রায়ই বিভিন্ন মিটিংয়ে তাকে অংশগ্রহণ করতে হয় জানিয়ে রাতে অফিস করার বিষয়ে তিনি বলেন,তার কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় রাত হয়ে যায় ।

স্বাআলো/এস/বি

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

পটুয়াখালীতে বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: মহান ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে...

কেউ যেনো মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে না পারে: জামায়াতে আমির

ছাত্রদের স্যালুট জানানোর ইচ্ছা পোষণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর...

নড়াইলে ইউপি সদস্যকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা

নড়াইলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারী (৫০) ইউপি সদস্যের মৃত্যু...

ফের বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল

সয়াবিনের সংকট কাটাতে চলতি মাসের শুরুতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে...