বিনোদন

সংগীতশিল্পী জুয়েলকে স্মরণ করে তারকাদের শোকবার্তা

| July 31, 2024

বিনোদন ডেস্ক: দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল প্রয়াত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ১১টা ৫৩ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জুয়েল। তার মৃত্যুতে দেশের সংগীতানুষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী তারকা শিল্পীরা।

গণমাধ্যমে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেছেন, জুয়েল ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলে গেলো, ভাবতেই পারছি না। আমাদের সবাইকে তো একদিন চলে যেতে হবে। শাফিন ভাইয়ের পরপরই জুয়েলের মৃত্যু! একসঙ্গে দুইটি মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। জুয়েলের কিছু গান আছে এখনো শ্রোতারা মনে রেখেছে। সে সবসময়ই ভালো গান গাওয়ার চেষ্টা করতো। বিরহের গানই বেশি গাইত। প্রত্যেকটি গানই একটি মাত্রা রাখে। গানের কথা, সুরে ভিন্নতার ছাপ ছিলো।

আরো বলেন, আমার উপস্থাপনায় ‘সুরের আয়না’ নামে একটি অনুষ্ঠানে তাকে ডেকেছিলাম। অনেক কথা হলো সেই অনুষ্ঠানে। অসাধারণ কিছু গান শুনলাম। তার অস্থিরতায় মিশে যাওয়ার মানসিকতা কখনোই ছিলো না। পথচলাটাই ছিলো সুন্দর। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

সংগীতশিল্পী জুয়েলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রয়াত এই শিল্পীকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরেক শিল্পী নকীব খান। গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, হঠাৎ করে খবর পেলাম হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল আর নেই। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। শাফিনের পর জুয়েলও চলে গেলো। একে একে প্রিয় মানুষগুলো আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর নিতে পারছি না। এত প্রতিভাবান একটা ছেলের চলে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। জুয়েল যখন গান গাইতে শুরু করেছিলো তখনই আমার সঙ্গে পরিচয়। বাচ্চুর (আইয়ুব বাচ্চু) সঙ্গে সে অনেক কাজ করেছে। আমরা একসঙ্গে ‘সংগীত ঐক্য’ নামে একটি সংগঠনও করেছি। জুয়েল স্টেজ উপস্থাপনায়ও ছিলো দারুণ। তথ্যচিত্র নির্মাণেও রেখেছে সফলতার স্বাক্ষর। সবকিছু মিলিয়ে সে কমপ্লিট একটা কালচারাল মানুষ ছিলো। জুয়েলকে আল্লাহ ভালো রাখুক–এ প্রার্থনাই করছি।

প্রয়াত এই শিল্পীকে নিয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমে স্মৃতি কথা লিখেছেন সংগীত তারকা বাপ্পা মজুমদার। নিজের দীর্ঘ স্মৃতি বার্তায় বাপ্পা মজুমদার লিখেছেন, ১৯৯২ সালে জুয়েল ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। জুয়েল ভাইয়ের উদ্যোগেই আমার প্রথম অ্যালবাম করা এবং প্রকাশ করা। অ্যালবামের নাম ‘তখন ভোরবেলা’। সেই অ্যালবাম দিয়েই শিল্পী বাপ্পা মজুমদার হিসেবে আমার পথচলা শুরু। জুয়েল ভাইয়ের মাধ্যমেই আমার পরিচয় হয় সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে। তারপরেই তো দলছুটের জন্ম। মা, বাবা আর বড়দার পরে আমার জীবনে দুইজন মানুষকে আমার মেন্টর হিসেবে বিবেচনা করি। একজন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, অন্যজন সঞ্জীব চৌধুরী।

নিজের দীর্ঘ শোকবার্তায় বাপ্পা আরো লিখেছেন, অল্প কয়দিন আগেই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিলো টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে। কথা বেশি দূর এগোয়নি। যখন হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন তিনি আইসিইউতে। ডাক্তাররা তখন কাউকেই অ্যালাউ করেননি। মন থেকে চাইছিলাম, জুয়েল ভাই যেনো চলে না যান, সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আমাদের মাঝে। তা আর হলো না। সারাটা জীবন খুব মিস করবো জুয়েল ভাইকে।

নিপুণের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

গায়ক শুভ্র দেব বলেছেন, জুয়েল অনেক ক্রিয়েটিভ একজন মানুষ ছিলো। তার অনেক জনপ্রিয় গান আছে। সত্যি কথা বলতে কি, জুয়েলের আসলে চলে যাওয়ার সময় হয়নি। আমি আজকে খুবই আপসেট। ওর চলে যাওয়া সংগীতাঙ্গনের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেছেন, জুয়েল ভাইয়ের সাথে আমার কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। তার সাথে আমার অনেক বোঝাপড়ার একটি সম্পর্ক ছিলো। শুরুর দিকে আমরা একসাথে অনেকগুলো কাজ করেছিলাম এবং প্রত্যেকটি কাজই মানুষজন খুব পছন্দ করছিলো। যেমন ‘বোঝনি’, ‘ভালোবাসা কাকে বলে’, ‘তোমার কাছে’, ‘জীবন মরণ আমার কাছে’ সহ বেশ কিছু গান। জুয়েল ভাইয়ের কাজের মাধ্যমে আমরা তাকে স্মরণ করবো।

সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা পার্থ বড়ুয়া জুয়েলের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, আমি জুয়েলের মুখে কোনোদিন নেগেটিভ কথা শুনিনি। তিনি চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন। অত্যন্ত ভালো হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তিনি শুধু সংগীতশিল্পী না, একজন ভালো নির্মাতা ছিলেন। আমার কোনো সমস্যা হলে তাকে ফোন দিতাম। তিনি সবসময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। মিউজিশিয়ান ও ডিরেক্টর একসাথে হওয়ার জন্য তিনি ছিলেন আমাদের সম্পদ। আমরা তাকে হারালাম। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টদায়ক।

প্রসঙ্গত, ব্যান্ড সংগীত যখন বেশ আলোচনায় তখন নতুন জোয়ারে হাজির হন গায়ক জুয়েল। বাবা ব্যাংকার হওয়ার কারণে ছোটবেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকতে হয়েছে তাকে। তবে মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংগীতে অভিষেক তার। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে সংগীতে হাতেখড়ি। আর মঞ্চে প্রথম গান করেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায়। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়ান। সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিতি হতে থাকে। ১৯৯২ সালে প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হয়। দশটির মতো অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। তবে এর মধ্যে ‘এক বিকেলে’ অ্যালবামটি বেশি পরিচিতি লাভ করে। অ্যালবামটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর গায়কের নামই হয়ে যায় ‘এক বিকেলের জুয়েল’।

স্বাআলো/এস

Debu Mallick