সম্পাদকীয়: দেশে শব্দ দূষণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনকার নীরব এলাকাগুলোতেও শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে আড়াইগুণ বেশি। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে এ তথ্য দিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন ‘পরিজার’।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র এলাকার জন্য দিনে ও রাতে আলাদা করে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল মাত্রা। আর আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল কিন্তু ঢাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে ও রাতে দুই-তিনগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরো বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কর্তৃপক্ষের অনুমতিপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। কেউ যদি এ নিয়ম না মানে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ইখতিয়ার রয়েছে কর্তৃপক্ষের কিন্তু এ আইন প্রয়োগ হতে দেখা যায় না কোথাও। আর শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমের জন্য কাউকে যদি আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে শব্দদূষণ এভাবে বৃদ্ধি পেত না। আইন থাকতেও কর্তৃপক্ষ সে আইন কেনো ব্যবহার করে না, সেটা একটা প্রশ্ন। দেশে শব্দদূষণ ঘটেই চলেছে। এ থেকে কি মুক্তি মিলবে না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শব্দদূষণে গর্ভবতী মায়েরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অস্থিরতায় ভোগার কারণে ঘোমাতে পারেন না। আর এ কারণে শিশুর শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে মানুষ শ্রবণশক্তি হারানোসহ নানান জটিল রোগেও আক্রান্ত হয়।
রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। তাদের অবশ্যই বিধি বা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে। লাউড স্পিকার ব্যবহারে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। উচ্চশব্দের হর্ন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে এর আমদানি বন্ধ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সরকার আইনের কঠোর প্রয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের মানুষ শব্দ দূষণের মতো নীরব ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে আমরা মনে করি।
স্বাআলো/এস