জাতীয়

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ২১ বছরে সর্বনিম্ন

ঢাকা অফিস | May 6, 2025

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন স্থবিরতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিলো ১৬ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই ঋণ বৃদ্ধির পেছনে প্রকৃত বিনিয়োগ নয়, বরং সুদের হার বৃদ্ধিজনিত সুদ সংযোজন দায়ী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হওয়ায় ব্যবসায়িক খরচ বেড়ে গেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর। নতুন বিনিয়োগে অনীহা বাড়ছে, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকছে শুধু বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, উচ্চ সুদ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে, খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে এবং সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। তার মতে, কঠোর মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও বেসরকারি খাতে সংকট আরো গভীর করেছে।

বাংলাদেশকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক

এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলো ঝুঁকছে তুলনামূলক নিরাপদ মুনাফার পথ-সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে। যেখানে সুদের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ, সেখানে ব্যবসায়িক ঋণের ঝুঁকি নেয়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরো কমে আসছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থিতিশীলতা না থাকলে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারান। বরং বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৬ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানিতেও ধস নেমেছে। পেট্রোলিয়াম, ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও মেশিনারিজ আমদানিতে এলসি কমেছে যথাক্রমে ৩.৮৩, ১.৬১ এবং ২৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শিল্প খাতে ভয়াবহ সংকেত। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ঘাটতির কারণে অনেক কারখানা উৎপাদন সক্ষমতার নিচে চলছে, কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ফেব্রুয়ারির শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিলো মাত্র ৬.৮২ শতাংশ—২০০৪ সালের পর সর্বনিম্ন। বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬০ হাজারে।

জিডিপির প্রবৃদ্ধিও লক্ষণীয়ভাবে কমে এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪.২২ শতাংশ, যা সরকারি পূর্বাভাসের চেয়েও কম। একইসঙ্গে রাজস্ব ঘাটতিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকায়।

এপ্রিল মাসে দেশের রফতানি আয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের পতন। ইপিবির তথ্যমতে, এপ্রিলের রফতানি আয় ছিলো ৩.০১ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্চের তুলনায় রফতানি কমেছে ১.২৪ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষ করে ওভেন গার্মেন্টস খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ৪.৬৫ শতাংশ, যদিও নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি ছিলো ৫.০৮ শতাংশ। বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রফতানিতে টিকে থাকতে হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo