জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে অচল জনজীবন হয়ে পড়েছে। ঘরের জানালায় পর্দা দিয়ে গরম হাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে নিস্তার নেই চুয়াডাঙ্গাবাসীর। কর্মহীন মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, শনিবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৮ শতাংশ। এদিন দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৮ শতাংশ এবং সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৫৮ শতাংশ।
তীব্র তাপপ্রবাহ, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গায় টানা পাঁচদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আওতায় রয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৩৪ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৭ শতাংশ। সকাল ৯টা তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪৫ শতাংশ এবং দুপুর ১২টায় রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৯ শতাংশ। বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, চুয়াডাঙ্গায় চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার আওতায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪২ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৫ শতাংশ এবং দুপুর ১২টায় রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১৫ শতাংশ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৩৭ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ২২ শতাংশ এবং দুপুর ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৩১ শতাংশ। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪৭ শতাংশ। এদিন বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ২৭ শতাংশ এবং ওই দিন বেলা ১২টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সে সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪৩ শতাংশ।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, বিপর্যস্ত জনজীবন
তিনি আরো জানান, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়লগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, একই উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে ও ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দফতরি জাকির হোসেন (৩৫) শনিবার নিজের জমিতে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তিনি মারা যান।
‘হিট স্ট্রকে’ জাকির হোসেন মারা গেছে, এমন খবরের ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎিসকরাই বলতে পারতেন কিভাবে সে মারা গেছে। পথের মধ্যে সে মারা গেলে তার মরদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়, সে কারনে ‘হিট স্ট্রকে’ মারা গেছে এটা বলা যাবে না। তবে অসুস্থতার কারনে সে মারা গেছে।
তীব্র তাপপ্রবাহ, সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসক ড.কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, অতি তীব্র, তীব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহের কারনে দিন মজুরাসহ খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য রবিবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
স্বাআলো/এস