সম্পাদকীয়: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দিনকে দিন গাঁজার ব্যবসা রমরমা হচ্ছে। এই এলাকায় গাঁজা উদ্ধারের পরিমাণ যতোই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে। তাও দুই-এক পুরিয়া নয় ১০-২০ কেজি থেকে প্রায় মণ পর্যন্ত।
১ এপ্রিল যশোরের শার্শা উপজেলার হরিণপোতা গ্রামের টয়লেটের সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে ৩৮ কেজি গাঁজাসহ আয়না মতি (৪০) নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। প্লাস্টিকের দুইটি ড্রামে এই গাঁজা ছিলো। একই দিন বাগেরহাটের দ্বিগরাজ ব্যাংক রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত কেজি গাঁজাসহ সাত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে ২০ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ।
২০ জানুয়ারি উপজেলার গাড়ফা থেকে তাদের আটক করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে খুলনায় ১২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব। গত জুলাই মাসে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কানাইরালী থেকে ১১ কেজি গাঁজা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা আটক করেছে। নেশার কালো থাবা এমনভাবে মানুষকে গ্রাস করে যে নেশাসক্ত নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। জীবন তাদের কাছে হয়ে ওঠে তুচ্ছ। মরবে কি বাঁচবে সে জ্ঞান তাদের থাকে না। তারা সব সময় মানসিক উচ্ছৃঙ্খলা, অবসাদ ও বিষন্নতায় ভোগে। এর মধ্যে গাঁজাখোরদের অবস্থা সব চেয়ে মারাত্মক। তারা পুরোপুরি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায়। মাদকাসক্তরা মাদকদ্রব্য কেনার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে অপরাধ জগতে সে নিজেকে সমর্পণ করে। তখন কোনো অনুভূতির মূল্য সে দিতে জানে না সে ।
কোনো পরিবারের ছেলে, স্বামী, মেয়ে যে কোনো সদস্য মাদকাসক্ত হলে পরিবারটা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হয়। সমাজে সবাই এদের অপরাধী মনে করে। কারণ নেশার পয়সা জোগাড় করতে এরা নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি কারো কাছে মান সম্মান থাকে না। ঘরে ভাই বা বাবা কেউ মাদকাসক্ত হলে মেয়ের বিয়ে দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। কারণ এ পরিবারের সদস্যদের কেউ সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। সমাজে এরা অবহেলিত, অযাচিত, অপাংতেয়।
মাদকাসক্ত নিজের পরিবারের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে। সকল সৎ গুণ, ক্ষমা, ধৈর্য, বিনয়, সহনশীলতা ইত্যাদি মূল্যবোধ বিলুপ্তির ফলে সে মানসিক ও আত্মিক শূন্যতায় ভুগতে থাকে। ফলে সবদিক থেকে সে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এক কথায় মাদকাসক্তরা সমাজের সকল অশান্তির মূল।
এ মূল উৎপাটনে সরকার যে শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সফল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
স্বাআলো/এসআর