আন্তর্জাতিক

দালালের খপ্পরে পড়ে জাম্বিয়ায় ৩ বাংলাদেশির মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক | October 22, 2025

দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে জাম্বিয়ায় তিন বাংলাদেশি যুবক নাজমুল শিপু (২৫), আবেদ মিয়া (২০) এবং সাইফ উদ্দিন রায়হান (২১) মারা গেছেন।

নিহতদের পরিবার তাদের সন্তানদের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা বা সঠিক তথ্য পেতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছেন।

চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই যুবকের মৃত্যু

চাঁদপুর জেলার মতলব থানার বোয়ালিয়াবাড়ির বাসিন্দা নাজমুল শিপু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার তালশাহার এলাকার বাসিন্দা আবেদ মিয়া গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জাম্বিয়ায় মারা যান। নবীনগরের দালাল বাবু ও কামরুজ্জামান দিপু নিহতদের পরিবারকে এই খবর দেন।

নিহতদের আত্মীয়রা জানান, বাবু ও কামরুজ্জামান দিপু নামের দুই দালালের সঙ্গে নাজমুল শিপু ও আবেদের পরিবারের সরাসরি ফ্লাইটে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠানোর চুক্তি হয়েছিল। গত সপ্তাহে ঢাকার একটি ট্রাভেলসের মালিক পুলকের মাধ্যমে ইথিওপিয়া পর্যন্ত বিমানের টিকিট কাটা হয়। কিন্তু দালালরা কথা পাল্টে তাদের ইথিওপিয়া এনে সড়কপথে মালাউই হয়ে জাম্বিয়া নিয়ে আসে। সেখানে একটি চক্র তাদের অনাহারে রাখে।

নিহতদের এক সফরসঙ্গী জানান, জাম্বিয়ার দালাল চক্র তাদের দীর্ঘ দিন অনাহারে রেখেছিল। ছোট একটি রুমে পাঁচজনের জায়গায় ১৫-২০ জন লোককে রাখা হতো, যেখানে কেউ ঘুমাতো আর কেউ দাঁড়িয়ে রাত কাটাতো। সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বললে তাদের মারধর করা হতো।

নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, দালালরা এখন তাদের কোনো পাত্তা দিচ্ছে না এবং একেক সময় একেক কথা বলছে। সন্তান হারিয়ে তাদের পিতামাতা পাগলপ্রায়।

চট্টগ্রামের তরুণের করুণ মৃত্যু

এদিকে, জাম্বিয়াতে বাংলাদেশি তরুণ সাইফ উদ্দিন রায়হানের (২১) মৃত্যুর খবর তার পিতার কাছে পৌঁছায় সোমবার রাত ১টায়, মৃত্যুর সাত দিন পর। রায়হান চট্টগ্রাম জেলার বাঙ্গালনূরের জোরারগঞ্জের বাসিন্দা এবং এসএসসি ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পিতা সালাউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের থেম্বিসায় বসবাস করেন।

রায়হানের ঘনিষ্ঠজন জানান, সরাসরি ফ্লাইটে রায়হানকে দক্ষিণ আফ্রিকা নেওয়ার কথা থাকলেও দালাল জয়নাল আবেদীন ফারুকের সঙ্গে বাংলাদেশি ৯ লাখ টাকার চুক্তিতে পথ পরিবর্তন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা আসার পূর্বে ফারুককে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর রায়হানসহ ছয় তরুণ ঢাকার চাঁখারপুলে মুনিম শাহরিয়ারের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও এয়ার টিকিট বুঝে নেন। কথা ছিল দুবাই বা কাতার হয়ে আফ্রিকায় পৌঁছানোর, কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে গিয়ে তারা জানতে পারেন যে, তাদের সড়কপথে নেওয়া হবে। ঢাকা থেকে ইথিওপিয়া হয়ে সড়কপথে মালাউই, সেখান থেকে জাম্বিয়া, তারপর মোজাম্বিক হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশের কথা ছিল।

ছয়জনকে নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ গাইডের নির্দেশনায় হাঁটা শুরু হয়। দুর্গম পাহাড়ি পথে পায়ে হাঁটার কারণে রায়হান ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কঙ্গোর সীমান্ত থেকে জাম্বিয়ার পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় তিনি পাহাড় থেকে পড়ে যান।

রায়হানের সফরসঙ্গীদের ভাষ্যমতে, পথ দেখানো স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা রায়হানকে কাঁধে নিয়ে যাওয়ার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জোরে ফেলে দেয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রায়হান বলেন, “আমার পাসপোর্ট আর জুতাজোড়া আব্বুর কাছে পৌঁছে দিয়েন।”

রায়হানের সঙ্গীরা পরিবারকে জানান, মৃত্যুর পর দালাল চক্র তার লাশ ওই পাহাড়েই পুঁতে ফেলেছে। এতে পরিবার লাশ উদ্ধারে চরম সংকটে পড়েছে।

রায়হানের বাবা বলেন, “ব্যবসায় সহযোগিতা করতে ছেলেকে এখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। দালালের কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এমন মৃত্যু কোনো পিতা মেনে নেবে না।” তিনি সন্তানের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo