রুহুল আমিন, যশোর: যশোরের পুরাতন কসবার ঘোষপাড়া ও রায়পাড়া অঞ্চলে ভৈরবনদীর গর্ভে বিহীন হয়ে গেছে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের বসতবাড়ি। ঘরবাড়ি হারিয়ে এসব ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে তাদের ক্ষতি হয়েছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলানোর জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের দাবি করে পানির উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও পাঠিয়েছেন তারা।
দেখা যায়, যশোরের পুরাতন কসবা অঞ্চলে ভৈরবনদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের বসতবাড়ি। রায়পাড়ার জিলানী বাগান থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরপর ঘোষপাড়াসহ মিঠুর বাগান পর্যন্ত নদীর ধারে সব বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য মূলত এই সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে। বালি উত্তোলনের মূলহোতা ছিলেন একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি। তার নেতৃত্বে এখান উত্তোলন করা হয়েছে বলে ভোক্তভোগীদের অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালি উত্তোলন করে দেদারচ্ছে ব্যবসা করে গেছেন তিনি। বালির ব্যবসা থেকেই তিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। ওই সময়ে প্রশাসন যথাযথা ব্যবস্থা নিলে ভুক্তভোগীদের এই বিপদে পড়তে হতো না। ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হতে হতো না। মাথাগোঁজার শেষ সম্বলটুকু শেষ হতো না। নদীরপাড়ের বাসিন্দাদের জমি ও ঘরবাড়ি মিলে অর্ধশত কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আশিকুর রহমান জানান, ঘোষপাড়ার ভৈরব নদীর পাড়ে একতলা বাড়ি ছিল। বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তার বাবা ওসমান আলী মারা গেছেন। পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার পরিবারের একমাত্র বোন, মা ও তিনি বাড়িতে বসবাস করতেন। বোন ও তিনি দুজনই শিক্ষার্থী। বাড়ি হারানোর পর তার পরিবারের উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে কোনভাবেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। তাদের দেখার কেউ নেই’। এক কোটি টাকার তাদের ক্ষতি হয়েছে।
তুহিন হোসেন জানান, তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। নদী ভাঙ্গনে বাড়ি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ৩০ লাখ টাকার উপরে তার ক্ষতি হয়েছে।
গৌতম কুমার জানান, তিনি পেশায় নরসুন্দর। তার বসতবাড়িটি নদী গর্ভে শেষ হয়েছে। ৩৫ লাখ টাকার কাছাকাছি তার ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি হারানোর পর তিনি এখন পথে পথে ঘুরছেন। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেই’। গৌতমের মত একই কথা জানান আজিবর রহমান, খায়রুল ইসলাম, বারেক আলীসহ অনেকে। তাদের দাবি, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি সহযোগিতার বিকল্প নেই। সরকারিভাবে তাদের পাশে না দাঁড়ালে পরিবারগুলো ঘরবাড়ির মত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
যশোর অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার বলেন, নদী শাসনের জন্য নদীর পাশে বাঁশ-বল্লা ড্রাইভ করা হচ্ছে। কাজ চলমান রয়েছে। বাঁশ-বল্লা ড্রাইভ প্রকল্প চলমান থাকলে নতুন আর কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। ঘোষপাড়ায় এ প্রকল্পে কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে রায়পাড়ায় কাজ হবে। আশা করা যায় নতুন করে আর কারো বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হবে না।
স্বাআলো/এস