রফতনি হিসাবে গরমিল, সরকারি তথ্য–উপাত্ত নিয়ে সন্দেহ

ঢাকা অফিস: দেশের রফতানি আয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে আসছিলো সরকারি সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সেই তথ্য সংশোধনের পর দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দেয়া তথ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। রপ্তানি হিসেবে গরমিল প্রকাশ্যে আসার পর থেকে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা মনে করছেন, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতির নাজুক সময়ে নীতিনির্ধারকেরা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলোর কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতাও এর ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে ভুল রফতানি তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব করা অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও সংশোধন দরকার। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পরিসংখ্যান কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক সময়ের রপ্তানি তথ্য সংশোধনে দেখা যায়, গত দুই অর্থবছরের ১০ মাস করে মোট ২০ মাসে প্রায় ২৩ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার উধাও হয়ে গেছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রকৃত তথ্য আড়াল করে ইপিবি রপ্তানির ভুল তথ্য প্রকাশ করে আসছিলো। আর ইপিবির এই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের হিসাব করে এসেছে।

বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিলো ভারত, আসছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন

এই পরিপ্রেক্ষিতে রফতানির তথ্যে গরমিল ধরা পড়ায় মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিএনপি, লেনদেনের ভারসাম্য, বিদেশি ঋণ গ্রহণের নীতি সিদ্ধান্তসহ অর্থনীতির অনেক কার্যক্রমের সূচক সংশোধনের দাবি উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা ইপিবির তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসেছেন। বিভিন্ন সময়ে আইএমএফ থেকেও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ইপিবির তথ্যে বড় পার্থক্য নিয়ে গণমাধ্যমেও রিপোর্ট হয়েছে। এত আলোচনা-সমালোচনার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইপিবি কয়েক দফা বৈঠক করে এ সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে, এখন থেকে এই হিসাবের ক্ষেত্রে এনবিআরের তথ্যই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এ ভুল তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের বিষয়টি নিছক ভুল হিসেবে দেখতে নারাজ । রফতানিকারকেরাও এ নিয়ে ছিলেন অসন্তুষ্ট। তাঁরা বলছেন, এটি নিছক কোনো ভুল নয়, এই ঘটনা তথ্য-উপাত্তের ধারাবাহিক কারসাজিরই প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের দায়িত্বে থাকা নেতৃত্ব জেনেবুঝে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে খুশি করতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তগুলো ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। ভুল জেনেও রাজনৈতিক নেতৃত্বে এসব পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে। সাময়িকভাবে এর সুফল মিললেও শেষ পর্যন্ত তা দেশের ভাবমূর্তি ও তথ্য-উপাত্তের গ্রহণযোগ্যতাকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্তের নৈরাজ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করে আসছিলাম। এখন সরকারি উদ্যোগেই রফতানির তথ্যে তার প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের ঘটনায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা এবং দক্ষ নেতৃত্বের অভাবের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। দেরিতে হলেও রফতানির তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। এখন জিডিপি প্রাক্কলন থেকে শুরু করে অর্থনীতির অন্যান্য প্রক্ষেপণ বা পরিসংখ্যানের তথ্যগুলোও হালনাগাদ করার বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে।

তথ্য ও পরিসংখ্যানের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পরিসংখ্যান কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকারি তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান হচ্ছে রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ। সেখানে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি দেখা দিলে তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করে।

স্বাআলো/এস/বি

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

`সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস চলবে না’

সারাদেশে মোট ১৪ হাজার অনুমোদিত বাস ও ট্রাকের ফিটনেস...

পবিত্র শবে মেরাজ ২৭ জানুয়ারি 

বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ...

পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: বর্ণিল আয়োজনে পটুয়াখালীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের...

কাল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি

হালনাগাদ শেষে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ...