আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়া সরকারের অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ঘোষণার পর নামমাত্র জরিমানা দিয়ে প্রতিদিনই দেশে ফিরছেন শত শত অভিবাসী। কাগজপত্র বিহীন দেশে ফেরা এসব প্রবাসীদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশী। তারা দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন দেশে ফেরার প্রত্যাশায়। এসময় প্রবাসীদের বেশিরভাগই নি:শ্ব অবস্থায় দেশে ফিরছেন।
ধারনা করা হচ্ছে নানা জটিলতায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশী যার প্রভাব পড়তে পারে রেমিটেন্স প্রেরণেও।
অভিবাসন বিভাগের তথ্য বলছে ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অধীনে প্রথম ২০ দিনে এখনো পর্যন্ত নিজ নিজ দেশে ফিরেছে ১১ হাজার ৯৪৩ জন অভিবাসী এর মধ্যে দুই হাজার ৫৩০ জনই বাংলাদেশী। এখনো প্রতিদিনই অভিবাসন বিভাগে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। অভিবাসন বিভাগের অনলাইন এ্যাপয়েন্টমেন্ট এর জন্যও অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ। মার্চ থেকে শুরু হয়ে এ কর্মসূচি চলবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
অভিবাসন বিভাগ ধারনা করছে, বিভিন্ন দেশের তিন থেকে চার লক্ষ কাগজপত্র বিহীন অবৈধ অভিবাসী এই কর্মসূচির আওতায় শাস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দেশে ফিরবে।
ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ফিরতে হলে সরাসরি এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে অভিবাসন বিভাগের। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ওয়ানওয়ে টিকিট ও পাসপোর্ট। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদেরকে নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে সংগ্রহ করতে হবে ট্রাভেল পারমিট।
অভিবাসন বিভাগ ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে বিশেষ পাস দিলে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে নিজ দেশে ফিরতে হবে ঐ প্রবাসীকে।
দেশে ফেরা প্রবাসীদের এই তালিকায় বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেশ লম্বা হবে বলে মনে করেন, কমিউনিটি নেতা রাশেদ বাদল। তিনি বলেন, দেশে ফেরা ছাড়া আসলে এসব কর্মীদের আর কোন উপায় নেই। যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশিরভাগই কর্মহীন কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে কলিং ভিসায় এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকারও হয়েছেন। এভাবে দেশে ফেরাদের সংখ্যা বাড়লে তার প্রভাবে রেমিটেন্স প্রেরণেও পড়বে বলে মনে করেন, তিনি।
দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা নরসিংদী প্রবাসী সুমন মিয়া বলেন, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় এসেছি। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত ভিসা করতে পারিনি। বিভিন্ন স্থানে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকারও হয়েছি। এখন ভিসার পাশাপাশি কাজেরও সমস্যা হচ্ছে। তাই দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সুমন মিয়া’র মতো অনেকেই আছেন যারা নানা জটিলতায় ভিসা করতে পারিনি। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কর্মী ছাটাইও করছে। এছাড়া ফ্রি ভিসার নামে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়ে এসেছেন অনেক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। যারা এসব কর্মীদের প্রতিশ্রুতি মতো কাজ দিতে পারেনি। এসব কর্মীদের অনেকেই মালয়েশিয়া সরকারের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশে ফিরছে।
দেশে ফেরার তালিকায় রয়েছে তিন থেকে র্পাচ লক্ষ টাকা দিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় আসা বাংলাদেশীরাও। বিশেষ করে ২০২৩ সালে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতিতে যারা ভ্রমণ ভিসায় মালয়েশিয়ায় এসেছেন তারা কেউই ভিসা করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাদেরকে ফিরতে হচ্ছে দেশে।
এনিয়ে সম্প্রতি এক বক্তব্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামিম আহসান বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাগজপত্র বিহীন রয়েছে এমন বাংলাদেশীদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আর যাদের অবহেলায় কর্মীরা বৈধভাবে এসে প্রতারিত হয়েছে তাদের ব্যাপারেও হাইকমিশন বাড়তি সতর্ক থাকবে বলেও মন্তব্য করেন, তিনি।
স্বাআলো/এস