স্পোর্টস ডেস্ক: কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরের ফাইনালই হতে যাচ্ছে আকাশি-নীল জার্সিতে ডি-মারিয়ার শেষবারের মতো মাঠে নামা। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এরপর আর চিরচেনা সেই ট্রেডমার্ক হার্ট শেপের উদযাপন দেখা যাবে না।
এরপরই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন আর্জেন্টিনার এই তারকা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার ট্রফিখরা কাটাতে, যার ভূমিকা ছিলো অন্যতম। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়কও তিনি। বলা হয়, মেসির আলোতে ক্যারিয়ার জুড়ে কিছুটা আড়ালে থেকেছেন তিনি। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ফাইনালে ডি-মারিয়া খেলতে পারলে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপটাও হতে পারতো আর্জেন্টাইনদের।
কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে হাজারও স্মৃতির গল্পে নাম লিখিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। বিদায়বেলায় নিশ্চয়ই সেসব স্মৃতি নতুন করে ভাবাবে তাকে।
ফাইনালে আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য একাদশ ঘোষণা
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাও নিয়মিত আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের খোঁজখবর রাখেন। তাই তো ডি মারিয়ার বিদায়বেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন তিনি।
মাশরাফীর ভাষ্যমতে, আনহেল ডি মারিয়া তার শেষ ম্যাচ খেলতে নামছে, স্বাভাবিকভাবে আর্জেন্টিনা দল চাইবে, ট্রফি জিতে তাকে দারুণ একটা বিদায় দিতে। আনহেল কি করেছে আর্জেন্টিনার জন্য, তা চিন্তা করলে মনে হয়, শুধু মেসির কারণে সে সবসময় চোখের আড়ালে থেকে গেছে। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০১৪ বিশ্বকাপে তার ইনজুরির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এমন কি মেসিও ফাইনালে কিছুই করতে পারেনি। কারণ, ডি মারিয়া মাঠে না থাকলে ডিফেন্ডারদের মেসিকে মার্ক করা কিছুটা সহজ হয়ে যায়। সেদিন ফাইনালে লাভেজ্জি, তাও বেশ ভালো খেলছিলো, যে কারণে বেশ কিছু সুযোগ আর্জেন্টিনা তৈরিও করেছিলো, এমনকি লাভেজ্জির একটা ক্রস থেকে হিগুয়েন গোল করলেও, তা অফসাইড হয়।
কোপা ফাইনালে শাকিরা-মেসিকে দেখতে গুনতে হবে ৮০ লাখ
ম্যাশ মনে করেন, সেদিন ডি মারিয়া থাকলে সমীকরণ ভিন্নও হতে পারতো। মাশরাফীর দাবি, হাফটাইমের পর কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া লাভেজ্জিকে উঠিয়ে আগুয়েরোকে মাঠে নামাল, স্রেফ বড় নামের কারণে। ব্যস আর্জেন্টিনার আক্রমণ শেষ হয়ে গেলো। অথচ ডি মারিয়া থাকলে বিষয়টা পুরো ভিন্ন হতে পারতো। কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে গোল করা বা বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে গোল করা এগুলো বলাই যায়। তবে ডি মারিয়া ছাড়া মেসি বা আর্জেন্টিনা কতোটা দুর্বল তা বোঝার জন্য শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখলেই বোঝা যায়।
কাতার বিশ্বকাপে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচায় আর্জেন্টাইনরা। ফাইনালে গোলও করেছিলেন ডি মারিয়া। আকাশি-নীল শিবিরের ভক্ত ম্যাশের মন্তব্য, ৭০ মিনিটের পর ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নিলো স্ক্যালোনি, ব্যস ফ্রান্স একের পর এক আক্রমণ শুরু করলো এবং দুই গোলই শোধ করে ফেললো। অথচ ডি মারিয়া মাঠে থাকতে ফ্রান্সকে মেসি এবং ডি মারিয়া দুইজনকেই মাঠে রাখতে হচ্ছিলো, যার কারণে তারা অলআউট চাইলেও খেলতে পারছিলো না। এমনকি আর্জেন্টিনা এই বিশ্বকাপে নক-আউটে অলমোস্ট সব ম্যাচেই গোল খেয়েছে ডি মারিয়া মাঠ ছাড়ার পর। এমনকি ২০১৮ বিশ্বকাপে এই ফ্রান্সের কাছেই ৪-৩ গোলে হেরেছিলো, কিন্তু প্রথম গোল পেনাল্টিতে গ্রিসম্যান যখন দেয়, ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ডি মারিয়া ডি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক রেইনবো কিকে সমতায় ফিরিয়েছিলো আর্জেন্টিনাকে।
আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক ডি মারিয়া
সাবেক এই অধিনায়ক আরো লিখেছেন, এরকম অনেক অনেক দারুণ সব স্মৃতি সে মাঠে ছেড়ে যাচ্ছে, শুধু তাই না, মেসির পিক টাইমেই ডি মারিয়া ছাড়া মেসিকে অনেক ম্যাচ নিষ্প্রাণ মনে হয়েছে। আর মেসির শেষ সময়ে যখন মেসি তার সেই গতি হারিয়েছে তখন ডি মারিয়া ছাড়া কি করবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলা উচিত যে এই দলটা অনেকটাই মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছে। প্রায় ম্যাচেই অন্যরা গোল করছে এবং ভালোও খেলছে, স্ক্যালোনির সবচেয়ে বড় আবিষ্কার সম্ভবত এটাই।
মাশরাফী যোগ করেন, আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ, একজন অন্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবলের সমর্থক হিসাবে। আপনি অবশ্যই গুরু দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি। আপনাকে ভোলা প্রায় অসম্ভব।
স্বাআলো/এস