তামিমের বিদায়ে হতবাক ক্রিকেট ভক্তরা

দেশ সেরা বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার একটা সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচকদের সাথে বৈঠকও করেছিলেন তিনি। বিসিবির কাছে সময় নিয়েছিলেন সিদ্ধান্ত নেয়ার। কিন্তু শেষ অবধি জানিয়ে দিলেন আর ফিরছেন না। শুক্রবার রাতে ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যেমে ক্রিকেট থেকে বিদায়ের কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার এভাবে বিদায়ে হতবাক হয়েছেন ক্রিকেট ভক্তরা।
তিনি জানান, অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর। আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক। এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি।
তার বিদায়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন সতীর্থরা। বার্তাও দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) এর ব্যতিক্রম হয়নি। তামিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। শনিবার নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তামিমের ছবি গ্রাফিক্স করে কাভারে রেখেছে বিসিবি। সঙ্গে একটি পোস্টও দিয়েছে তারা। ক্যাপশনে লিখেছে, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটেছে এক অসাধারণ অধ্যায়ের। অগণিত স্মরণীয় মুহূর্ত আর দারুণ সব সেঞ্চুরিতে আপনি ক্রিকেটভক্তদের হৃদয়ে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
১৭ বছর আগে ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। তার শেষ ম্যাচটাও হয়ে থাকল এই ফরম্যাটেই। শেষ ম্যাচ খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ঘরের মাঠে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
বাংলাদের জার্সিতে ৭০ টেস্ট, ২৪৩ ওয়ানডে ও ৭৪টি টি-২০ খেলেছেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে দেশের অনেকগুলো রেকর্ড গড়েছেন দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের জার্সিতে ২৪৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬৫ গড়ে আট হাজার ৩৫৭ রান করেছেন তামিম। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার নামের পাশে আট হাজারের বেশি ওয়ানডে রান আছে।
রানের মতো সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতেও বাংলাদেশের মধ্যে সবার উপরে তামিম। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও তামিমের (১০৩টি)। সর্বোচ্চ মাহমুদউল্লাহর ১০৭টি।
ওয়ানডেতে এক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রানও তামিমের। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৮৭টি ওয়ানডে খেলে ২৮৫৩ রান করেন তিনি।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়েসে সেঞ্চুরির রেকর্ড তামিমের। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ বছর দুই দিনে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে তামিম সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০২৩ সালের এপ্রিলে। এই ফরম্যাটে ৭০টি ম্যাচ খেলে ১৩৪ ইনিংসে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৮৯ গড়ে পাঁচ হাজার ১৩৪ রান করেছেন। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছেন তিনি, হাফ সেঞ্চুরিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে (৪১)।
টেস্টে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড গড়েন তামিম। যা এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ড। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংস এসেছিলো এই জুটি। টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন তামিম।
আন্তর্জাতিক টি-২০’তে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তামিম ইকবাল। ২০২২ সালের জুলাইয়ে অবসরের আগে ৭৮ টি-২০’তে একটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৬৫ গড়ে তামিমের রান এক হাজার ৭৫৮ রান। যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চতুর্থ। জাতীয় দলের হয়ে তিনি সর্বশেষ টি-২০ খেলেছেন ২০২০ সালের মার্চে।
বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ব্যাটার যার নামের পাশে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি রয়েছে।
স্বাআলো/এস