বাড়তে পারে নদীর পানি, বন্যার ঝুঁকিতে যেসব জেলা

দেশজুড়ে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় বিশেষ করে উপকূলীয় ও নিচু এলাকার বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
সিলেট বিভাগের চার জেলা, তিন পার্বত্য জেলা, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাটে নদ-নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যাপ্রবণ তিন নদীর মধ্যে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী এবং মৌলভীবাজারের মনু নদ বর্তমানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের নিচু এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সোমবার (২ জুন) এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা নদী ও মৌলভীবাজার জেলার মনু নদের পানি সমতল আগামী ৪৮ ঘণ্টা বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারি, গোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই ও সোমেশ্বরীর মতো অন্যান্য নদ-নদীর পানি সমতলও আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে ঢল: বন্যা আতঙ্কে তিস্তাপারের মানুষ
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, আগামী বুধবার (৪ জুন) সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদ-নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
এদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। পরের দিন এটি স্থিতিশীল থেকে তৃতীয় দিনে হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে মুহুরী, ফেনী, হালদা নদীগুলো সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে তা এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে বইছে। এই নদ-নদীগুলোর পানি সমতল আগামী ৪ দিন বৃদ্ধি পেয়ে পরবর্তী এক দিন হ্রাস পেতে পারে, তবে বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা আপাতত নেই। অন্যদিকে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৫ দিন গঙ্গা স্থিতিশীল থাকলেও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে এই দুটি নদীর পানিও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, অতি ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারসহ পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের তীব্র আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যার শঙ্কা, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
ইতিমধ্যে দুদিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি ঘাগড়া এলাকায় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক সচল রাখতে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পানিবন্দি মানুষের জন্য ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বান্দরবানের লামার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া লালমনিরহাটে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহও বেড়েছে, যা নদীর উভয় তীরে বন্যার শঙ্কা তৈরি করেছে।
স্বাআলো/এস