উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে নতুন করে বন্যার আতঙ্ক তৈরি করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার মাত্র ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টার মধ্যে তা বিপৎসীমায় পৌঁছে যায়। দুপুরের দিকে পানি আরো বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে। এর আগে গত ২৯ জুলাই রাতেও তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছিল।
পানির এই অব্যাহত বৃদ্ধিতে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। অনেক এলাকার আমন ধানের চারা ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বখড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই আমনের চারা পানির নিচে। এখন আবার পানি বাড়ায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি।”
একইভাবে, বাইশপুকুর চরের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “প্রতি বছর বন্যায় আমাদের সব ভেসে যায়। এবারও সেই ভয় পাচ্ছি। আমরা ত্রাণ বা সাহায্য চাই না, তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্থায়ী বাস্তবায়ন চাই।”
এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসুল আলম জানান, সকালের ভারি বৃষ্টির সঙ্গে উজানের ঢল যুক্ত হওয়ায় তাদের বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী ও গোবর্ধন এলাকাও আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সিন্দুর্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং তাদের জন্য দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, “উজানের ঢলে পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে এখনও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি।”
অন্যদিকে, লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানিয়েছেন, “উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে এবং স্থানীয়ভাবেও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছি।”
পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
স্বাআলো/এস