নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্ট থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত সাধারণ ও অসহায় মানুষের বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে যশোরে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপিত হয়েছে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কবুতর এবং বেলুন উড়িয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এরপরে বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় শিল্পকলা একাডেমিতে এই উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান, যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম।
তিনি বলেন, বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা পাওয়া নাগরিক অধিকার। যা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় এমনকি উপজেলা পর্যায় এ কাজ শুরু হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় লিগ্যাল এইডের সেবা পৌছে দিতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নাগরিক এ অধিকার নিশ্চিতে তিনি যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এর আগে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়ার সহকারী জজ রাফিয়া সুলতানা। এসময় তিনি জেলা লিগ্যাল এইডের এক বছরের কর্মসূচিরর চিত্র পরিসংখ্যান আকারে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ২০২৩ সালে যশোর জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে ৮২৮ জনকে আইনি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ৬৬৬টি এডিআর আবেদন গ্রহন করা হয়েছে। ৭১৬টি ঘটনায় বিরোধ নিস্পত্তি করা হয়েছে। ৫৭৫ জনের মামলায় বিনামূল্যে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে ও ২০৬৯ জনকে আইনি সেবা দেয়া হয়েছে। বাইরেও প্রচারণা কার্যাক্রমের অংশ হিসেবে ৯টি মাসিক সভা, প্যানেল আইনজীবীদের সাথে মতবিনিমিয়, একাধিক সেমিনার ও উঠান বৈঠক করেছে যশোর জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি।
স্বাগত বক্তব্য শেষে লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবীদের মধ্যে দুইজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে সন্মাননা প্রদান করা হয়।
তারা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হক সুজা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনাল হোসেন। পরে তারা এ বিষয়ে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এসময় তারা এ ধরনের আয়োজনের ভূয়সী প্রশাংশা করেন। এরপর লিগ্যাল এইড থেকে সেবা গ্রহনকারী সুবর্না নুর তার লিগ্যাল এইড থেকে সুবিধা পাওয়ার গল্প সকলের সামনে তুলে ধরেন।
আলোচনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ সামছুল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক গোলাম কবীর, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা জাহাঙ্গীর, যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাসান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট, পিপি এম ইদ্রিস আলী, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সিয়ির আইনজীবী নজরুল ইসলাম, কাজী ফরিদুল ইসলাম ও শরীফ নুর মোহাম্মদ আলী রেজা, বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক এঞ্জেলা গোমেজ।
এ সভা সঞ্চালনা করেন যুগ্ম জেলা জজ খাইরুল ইসলাম ও সহকারী জজ সুজাতা আমিন।
এসময় বক্তারা বলেন, অসহায় ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানে লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেন। এতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ সেবার আওতায় আসেন। তবে, যশোরের সকল আইনজীবী যদি বছরে পাঁচজনকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা দেন সেক্ষেত্রে সেবার পরিধি বাড়বে।
এ বিষয়ে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা কামনা করেন। উপস্থিত আইনজীবীরা হাত তুলে এ বিষয়ে সমন্মতি ও কেউ কেউ প্রতি বছরে অন্তত পাঁচজনকে বিনা মূল্যে আইনি সেবা প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এরআগে অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জজ কোর্ট জামে মসজিদের ঈমাম ইলিয়াস হোসেন ও গীতাপাঠ করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ড কিপার শিমুল শিকদার।
অনুষ্ঠানে সদ্য প্রয়াৎ যশোরের সাবেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আহসান হাবীব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীনকে স্মরণ করে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
স্বাআলো/এস