ঝিকরগাছায় নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ২ ছাত্রদল নেতাসহ চারজন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গদখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আল মামুন বাপ্পি, দফতর সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, বেলেমাঠ গ্রামের জাবেদ হোসেন এবং পটুয়াপাড়া গ্রামের আমিনুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীকেও পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকেলে গদখালী বাজার এলাকায় এক তরুণীকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে অভিযুক্ত চারজন একটি পরিত্যক্ত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার তরুণী নিজেকে রক্ষা করতে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে, তবে ততক্ষণে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী থানায় গিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে এবং রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর-ই-আলম সিদ্দিকি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে, এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলো, কিন্তু প্রশাসন যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

পুলিশ জানায়, নির্যাতিত তরুণী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমার মধ্যে রয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হবে এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জেলা ছাত্রদল।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি বলেন, এই ধরনের নিকৃষ্ট অপরাধে জড়িতদের ছাত্রদলে কোনো স্থান নেই। সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তার দায় সংগঠন নেবে না। অভিযুক্ত দুই নেতাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আমরা চাই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। ছাত্রদল কখনো অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না।

এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নিন্দা জানিয়েছে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে। সংগঠনগুলোর দাবি, যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ ধরনের অপরাধ দমন করতে প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

এদিকে, এলাকাবাসী এই ঘটনায় বিচার নিশ্চিতের জন্য বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন যদি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

শার্শার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোতা গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের শার্শা উপজেলার ১০ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের...

আমরা যুদ্ধাবস্থায় আছি: প্রধান উপদেষ্টা

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ষড়যন্ত্রও ততই তীব্র হচ্ছে উল্লেখ...

যশোরে সন্তানকে জিম্মি করে মাকে ধর্ষণচেষ্টা, যুবক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে এক নারীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে হাসান নামের...

নোয়াখালীতে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার কবিরহাটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক...