সম্পাদকীয়: বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি কৃষি। আর কৃষির প্রাণ হচ্ছে কৃষক। বছরের পর বছর অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে, ফসল ফলায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বহু কষ্টে কৃষকরা ধান আবাদ করেছেন তাদের চোখে ন্যায্য মূল্যের স্বপ্ন, স্বীকৃতির আশা। তাদের স্বপ্ন এই ফসল বিক্রি করে সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেন, ঋণ শোধ করবেন, সংসারে স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজও অনিশ্চয়তার মুখে।
কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, সেই স্বপ্ন পূরণে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় মধ্যস্বত্বভোগী দালালদের আধিপত্য, সরকারের অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং মন্থর বাজার ব্যবস্থাপনা।
সরকারি ক্রয় কার্যক্রম সঠিক সময়ে শুরু না হওয়ায় লাভবান হয় কিছু মজুতদার, ফড়িয়া, আর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় পরিচালিত স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এ অবস্থায় কৃষক তার শ্রমের ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন, পরবর্তী বছর ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা।
সরকার যদি সময়মতো মাঠ পর্যায়ে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে, তবে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর ও কৃষকবান্ধব কেনা-বেচার একটি টেকসই কাঠামো। স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি অফিস ও খাদ্য অধিদপ্তরকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে দালালরা ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকতে না পারে।
শুধু ধান নয়, দেশের প্রতিটি কৃষিপণ্য নিয়েই একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তাই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে, কৃষকের স্বপ্নকে মূল্য দিয়ে, তার জীবিকা রক্ষায় সরকারকে আগে থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়নের নামে কৃষকের স্বপ্ন যদি বারবার ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই কৃষিবান্ধব হতে চায়, তবে ধান কাটার আগেই কৃষি বিপণন ব্যবস্থা ও সংগ্রহ কার্যক্রমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান কেনা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন নিশ্চিত করা, ও দালাল নির্মূলে কঠোর মনিটরিং চালু করা এগুলো হতে হবে সরকারের অগ্রাধিকার।
কৃষকের ঘামে তৈরি ফসলের ন্যায্য দাম দেয়া শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। কৃষক বাঁচলে কৃষি বাঁচবে, আর কৃষি বাঁচলে দেশ টিকবে।
এখনই সময় কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের স্বপ্ন যাতে আর না ভাঙে, সেই নিশ্চয়তা দেয়ার।
স্বাআলো/এস