টানা বৃষ্টি আর কত দিন থাকবে

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | May 30, 2025

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থলভাগে উঠে আসায় সারাদেশেই বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা এবং থেমে থেমে কখনো মুষলধারে আবার কখনো হালকা বৃষ্টি ঝরছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অন্তত ছয়টি বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

একই সাথে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা এবং ছয়টি জেলায় বন্যার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত জারি রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। এটি বর্তমানে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে টাঙ্গাইল ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে আজ শুক্রবারও ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে, তবে মাত্রায় ভিন্নতা থাকবে। আজ দেশের আটটি বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে, এরপর থেকে বৃষ্টিপাত কমতে শুরু করবে। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টি দেখা যেতে পারে।

৫ বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে, জনজীবন বিপর্যস্ত

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দুই নম্বর এবং অন্যস্থানের জন্য জন্য এক নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে পূর্বাভাসে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, সেখানে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস আরো জানিয়েছে, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেইসাথে ভারী বর্ষণ জনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলেও তারা সতর্কবার্তা দিয়েছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের অনেক স্থানে ইতিমধ্যেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে পথে নামা নগরবাসীর ভোগান্তির কারণ হচ্ছে।

এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ছয়টি জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। এসব এলাকার নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। জেলাগুলো হলো ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সংস্থা আরো জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিও আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। আগামী দুইদিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে বলেও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমছে, তবে আগামী তিন দিন বাড়ার আভাস থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে এবং একদিন স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী চার দিন বাড়ার আভাস থাকলেও বিপৎসীমার নিচে থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল এবং পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে; নদী দুটির পানি আগামী পাঁচ দিন বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা বিপৎসীমার নিচে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদফতর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছে।

স্বাআলো/এস