যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৮ ডিগ্রি

যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় যৌথভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় একদিনের ব্যবধানে প্রায় ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমলেও কমেনি গরমের তীব্রতা কমেনি। অস্থির হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষেরা ৷

বুধবার (১ মে) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১২ শতাংশ। একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরেও। যৌথভাবে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। যা ১৯৮৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে ৪০ বছরের ইতিহাসে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। মঙ্গলবারের তুলনায় আজ জেলায় দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে।

যশোরে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি 

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আগামীকাল থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে করতে পারে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বুধবার যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও খুলনায় ৪২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, মোংলায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

মঙ্গলবার যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। এ ছাড়া খুলনায় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, খুলনার কয়রায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, মোংলায় ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবারের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও কমেনি গরম।

রেকর্ড ভেঙে যশোরের তাপমাত্রা ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস

তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল হয়েছে পড়েছে যশোরবাসী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের চলাচল অনেকটাই কম দেখা গেছে। তাপদাহের মধ্যে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা।

যশোর সদরের সুজলপুর এলাকার রিকশা চালক রিপন দাস বলেন, সকাল ৯টার দিকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। ২০০ টাকা আয় হলেও নিজের জন্যে খরচ করেছি ৫০ টাকা। দিনশেষে মহাজনের দিতে হয় আড়াইশ’ টাকা। রোদের ঝাঁজ বেশি বিধায় দুপুরে ভাড়া খাটা কষ্টের। তাছাড়া ওই সময় রাস্তায় লোকজনও বেশ কম হয়।

শহরের বিভিন্ন মোড়ে পথচারীদের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতল পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত পান করানো হচ্ছে।

নির্দেশনা উপক্ষো করে যশোরে তীব্র তাপদাহে চলছে কোচিং বাণিজ্য

গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২৭১ জন রোগী ভর্তি হয়। এরমধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয় ১৯ জন। হাসপাতালের সংক্রমণ (ডায়রিয়া) ওয়ার্ডে ভর্তি রোগের সংখ্যা ২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১৫ জন। এরমধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে গেছে ১৯ জন। এছাড়া প্রচণ্ড গরমে কী করণীয়, সে বিষয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ জন রোগী পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স চায়না খাতুন বিষয়টি জানান।

এদিকে, এই গরমে বিনা কারণে রোদে ঘোরাফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মধুসূদন পাল।

খুব সকালে হাটাহাঁটি ও ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যাবে। কিন্তু সেটি যেনো পরিমিত হয়। প্রচুর পানি, তরল খাবার, মৌসুমী ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কোনোভাবেই পঁচা-বাসি খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ঘরে কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। শরীর খারাপ হলে নিকটবর্তী হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে হবে।

স্বাআলো/এস