সম্পাদকীয়: আজ পবিত্র আশুরা। এ পৃথিবীর অস্তিত্বের সঙ্গেও আশুরার দিনের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আশুরার দিনেই আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন আকাশমালা, মর্তজগৎ, পর্বতরাজি, লওহ- কলম ও ফেরেশতাদের। আশুরার দিনে আল্লাহ নিজ আরশে আজিমে অধিষ্ঠিত হন। এভাবে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দিনের সম্পর্ক।
বিভিন্ন দিক দিয়ে এ দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি, জান্নাতে অবস্থান, পৃথিবীতে প্রেরণ ও তওবা কবুল সবই আশুরার তারিখে সংঘটিত হয়। হাদিসে আশুরা দিবসে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পরে আল্লাহর নিকট মহররম মাসের রোজা ফজিলতের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতম। -সহিহ মুসলিম- ১/৩৮৮।
হজরত নূহ (আ.) ৯৫০ বছর তাওহিদের দাওয়াত দেয়ার পরও যখন পথভ্রষ্ট জাতি আল্লাহর বিধান মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন তাদের প্রতি নেমে আসে আল্লাহর গজব মহাপ্লাবন।
এই মহাপ্লাবনের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পায় তারা যারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে হজরত নূহের (আ.) নৌকায় আরোহণ করে। ওই নৌকা ৪০ দিন পর জুদি পাহাড়ের পাদদেশে মাটি স্পর্শ করে ঐতিহাসিক আশুরার দিন। এ দিনেই হজরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম, ‘খলিলুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ও নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পান। হজরত ইদরিসকে (আ.) বিশেষ মর্যাদায় চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয় আশুরার দিনে। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর হজরত ইউসুফের (আ.) সঙ্গে তার পিতা হজরত ইয়াকুবের (আ.) সাক্ষাৎ যেদিন হয় সে দিনটি ছিলো আশুরার দিন। নবী আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কুষ্ঠরোগ ভোগ করার পর আরোগ্য লাভ করেছিলেন আশুরার দিন। হজরত ইউনূস (আ.) ৪০ দিন মাছের পেটে থাকার পর
মুক্তিলাভ করেন আশুরার দিন। ঘটনাক্রমে হজরত সোলায়মান (আ.) সাময়িক রাজত্বহারা হন।
আল্লাহতায়ালা তাকে আবারও রাজত্ব ফিরিয়ে দেন আশুরার দিনে। আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে পানির মধ্যে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে পার করে দেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে মারেন আশুরার দিন। হজরত মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন আশুরার দিনে। এ দিনে হজরত ঈসার (আ.) জন্ম হয় এবং ইহুদিরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহতায়ালা তাকে ফেরেশতা কর্তৃক সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন এ দিনেই।
দাবি করা হয়, কাবা শরিফ সর্বপ্রথম গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয়েছিলো আশুরার দিন। আশুরার দিনটি যে কারণে বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয়, শিক্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক তা হলো কারবালার ঘটনা। হজরত রাসুলুল্লাহর (সা.) দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ে কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদত বরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন। আশুরার এসব ঘটনাবলীতের রয়েছে মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু।
আশুরার মহান শিক্ষাগুলো হলো, আশুরার দিনটি মূলত মিথ্যার পরাজয় এবং সত্যপন্থী, হকপন্থীদের বিজয় ও মুক্তির দিবস। নবী ও তাদের অনুসারীগণের ইতিহাস স্মরণপূর্বক আল্লাহর বিধান পালন ও বাস্তবায়নে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যথার্থমানের হতে হবে। তাহলেই কেবল আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর সব মিথ্যা শক্তির মোকাবেলায় মুসলমানদের বিজয়ী করবেন। ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে সবাইকে আহবান জানাতে হবে।সত্য ও ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে মিথ্যা বা অন্যায়ের মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমাদের উচিত সর্বদা সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সঙ্গে থাকা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক সফলতা অর্জনের জন্য ভালো আমল করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।
স্বাআলো/এস/বি