নোয়াখালীর চাটখিলে সিংবাহুড়া গ্রামে এক গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ নভেম্বর দিনগত রাতে পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত গৃহবধূর নাম ফাতেমা আক্তার মরিয়ম ওরপে অর্পিতা (১৭)। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী রাইসুল ইসলাম রুবেলের স্ত্রী ও একই উপজেলার শাহনেয়ামতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন-শাহীন আক্তার দম্পতির মেয়ে।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সহকারী পিপি এ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন কৈশোর এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে গত সোমবার ২৭ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানী শেষে বিচারক আব্দুর রহিম মামলাটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতে চাটখিল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের ইতালী প্রবাসী ফারুক মিয়ার ছেলে ইতালী প্রবাসী রাইসুল ইসলাম রুবেলের সঙ্গে চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে অর্পিতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার স্বামী ইতালী চলে যান। গত দুই মাস আগে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি অর্পিতাকে ইতালী নিয়ে যাওয়ার জন্য তার জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স সংশোধন করে এবং ইতালী যাওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা তার বাবার বাড়ি থেকে এনে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু অর্পিতার বাবা কৃষি কাজ করার কারণে ২০ লাখ টাকা দেয়া সম্ভব হয় নি। এ নিয়ে অর্পিতার শাশুড়ি রহিমা বেগম (৫০) ও তার ননদ ফারহানা প্রতিনিয়ত তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে শুরু করে।
মামলায় আরো বলা হয়েছে, গত ২২ নভেম্বর অর্পিতার শাশুড়ি তার বাবার বাড়ি টাকার জন্য পাঠায়। সে তার বাবার বাড়ি গিয়ে টাকা ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করে। কয়েক দিনের মধ্যে টাকা ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিলে অর্পিতা শ্বশুর বাড়ি চলে আসে। এ নিয়ে শাশুড়ির সাথে অর্পিতার কথা কাটাকাটি হয়। ওই ঘটনার জের ধরে ২২ নভেম্বর দিনগত মধ্যরাতে অর্পিতার শাশুড়ি রহিমা বেগম (৫০), ননদ ফারহানা (৩০) তার স্বামী (ঘরজামাই) ফরিদ তাকে এলোপাতাড়ী মারধর, কিলঘুষি ও লাথি মেরে হত্যা শেষে মরদেহ বাথরুমে ফেলে রেখে অর্পিতা আত্মহত্যা করেছে বলে বাবার বাড়ি খবর দেয়।
জানা যায়, খবর পেয়ে তার বাবা মা ঘটনাস্থল গিয়ে বিছানায় শোয়া অবস্থায় মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেয়। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পৌঁছে লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, মামলা দায়েরের বিষয়টি জানি না। এ সংক্রান্ত আদালতের কোনো আদেশ থানায় এসে পৌঁছেনি। তবে ঘটনার পর পরই আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয়া হয়। ওই মামলায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করে নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। ননদের দুধের বাচ্চা থাকায় আদালত তাকে জামিন দেয় এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয়।
স্বাআলো/এসএ