সারাদেশে চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)। সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হবে লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা শেষে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪৬ জন, আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ৮৯৩ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজার ৯৯২ জন। দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২৩) তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নকলমুক্ত রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশ্নফাঁসের গুজব প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গুজব থেকে পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা মঙ্গলবার (২৪ জুন) জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
যশোর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি: ১৩৪ পরীক্ষার্থী পাচ্ছে অতিরিক্ত সময়
এ বছর পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বোর্ড ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে– পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা, ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য লেখা ও বৃত্ত ভরাট, উত্তরপত্র ভাঁজ না করা, শুধু সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা এবং বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি না থাকা। এছাড়া, পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তত্ত্বীয়, এমসিকিউ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে পাস করতে হবে। পরীক্ষার্থী শুধু প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে আসনবিন্যাস করা হয়েছে, অর্থাৎ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। প্রতিটি অংশের উপস্থিতি পত্রে পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
এদিকে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এসব নির্দেশনায় প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক রাখা এবং তিন ফুট দূরত্বে বসার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র যাচাই করে খামে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর দিন সকালে নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খাম খোলা যাবে এবং অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠাতে হবে। প্রশ্নপত্র আনার সময় থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনে মাইক ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরি, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে নকল প্রতিরোধ পোস্টার টানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে শুধু এনালগ কাঁটাযুক্ত ঘড়ি ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। এছাড়া, বর্ষাকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসকে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি ভুয়া
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে কেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে।
২০২৩ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সরকারের কঠোর নজরদারি ও প্রস্তুতি আরও জোরালো করা হয়েছে। অতীতের মতো যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাড়তি মনিটরিং চালানো হবে বলে জানা গেছে।
দেশের উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তের এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী পরশু।
স্বাআলো/এস