নিজস্ব প্রতিবেদক: সময়সীমা শেষ হওয়ায় ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার (১৫ মে) ছিলো সরকার কর্তৃক আমদানি ও বাজারে সরবরাহে বেঁধে দেয়া সময়সীমার শেষ দিন। শেষ সময়ে বেনাপোল বন্দর কোনো চাল আমদানি করেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। এতে বরাদ্দকৃত চাল আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, চাল রফতানিতে ভারত সরকারের শুল্ককর আরোপ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে এতদিন চাল আমদানি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। গত ২১ মার্চ ও ১৬ এপ্রিল দুই ধাপে দেশের ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ সাত হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিলো বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে চালের চাহিদা রয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ টনের মতো।
গত বছর উৎপাদন হয়েছিল চার কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও মজুদ করতে চাল আমদানি করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি দেশে চালের দাম বাড়লে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে গত ১৩ মার্চ দেশের ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। এরমধ্যে সিদ্ধ চাল রয়েছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন এবং আতপ চাল ৩৪ হাজার মেট্রিক টন।
পরবর্তীতে ১৬ এপ্রিল আরো ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন শর্তে এক লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সিদ্ধ চাল রয়েছে ৯১ হাজার মেট্রিক টন ও আতপ চাল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।
সরকার আমদানি ও বাজারে সরবরাহের শেষ সময় বেঁধে দিয়েছিলো এ বছরের ১৫ মে। তবে চালের ওপর ভারত সরকারের নানান শর্ত, ২৫ শতাংশ শুল্ককর যুক্ত ও দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট থাকায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করতে পারেননি। এর মধ্যে শেষ হয়ে যায় আমদানির সময়সীমা।
এ পর্যন্ত দুটি চালানে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। সময় শেষ হওয়ায় ও শুল্ক বৃদ্ধি বহাল থাকায় বরাদ্দকৃত অবশিষ্ট চাল আমদানি নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বাজারের চাল বিক্রেতা সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, বর্তমানে বাজারে চালের দাম বাড়তি। খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫৬ টাকা, মোটা চাল ৫০ টাকা, কাজল লতা ৫৫ টাকা ও বাসমতি চাল ৭৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি হলে আর নতুন ধানের চাল কৃষকের ঘরে উঠলে দাম কমবে বলে আশা করছি।
চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেনাপোলের নিপুণ এন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী লিপু হোসেন জানান, এবার তারা সরকারের কাছ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। তবে চালের ওপর ভারত সরকারের নানান শর্তের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ শুল্ককর যুক্ত ও দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট থাকায় এখন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে পারেননি। এর মধ্যেই আমদানির সময় শেষ হয়েছে। এতে তার অনেক টাকা লোকসান গুণতে হবে।
চাল আমদানিকারক হাজী মুছা করিম এন্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, চাল আমদানিতে ভারতে ২৫ শতাংশ ও বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে আমদানি করে তেমন লাভ নেই। নতুন করে সরকার আমদানির সময়সীমা বাড়ালে তারা আমদানির সুযোগ পাবেন।
বেনাপোল বন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী হেমন্ত কুমার সরকার জানান, নতুন করে চাল আমদানির অনুমতি পেলে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে। গত দুই বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাত্র ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্বাআলো/এস