ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। সবশেষ ইসরায়েলি হামলায় আরো ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে গত বছরের অক্টোবর থেকে এই উপত্যকায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে ৫৩ হাজার ৫০০ এর কাছাকাছি পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা আনাদোলুসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলার পর মধ্যরাত থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে এবং এই হামলায় অন্তত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে বার্তাসংস্থা আনাদোলু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ হাজার ৪৮৬ জনে পৌঁছেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৬৪ জন আহত হয়েছেন। এতে সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন, কিন্তু উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখনো পর্যন্ত তিন হাজার ৩৪০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ৯ হাজার ৩৫৭ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া এক ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে। কানাডা, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের নেতারা গাজায় নতুন করে আক্রমণ বন্ধ না করলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ২২টি দেশ অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি জোরালো আহবান জানিয়েছে।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল। তবুও থেমে নেই তাদের আগ্রাসন। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নিন্দা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় এক ধরনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস কিছুটা শান্তি বজায় ছিলো। কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় আক্রমণ শুরু করে।
স্বাআলো/এস