জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: আমাদের সোনার জামাই কিভাবে চলে গেলো। তার টাকা পয়সা সব কিছু নিয়ে যেতো, আমাদের জামাইকে ফিরিয়ে দিতো। কেনো এভাবে নিয়ে গেলো। সে তো কাউকে ক্ষতি করেনি। তাকে কেনো মেরে ফেলা হলো। আমরা এর বিচার চাই।
বুধবার (২১ মে) এমপির বাস ভবনের নীচে এভাবেই বিলাপ করতে বলছিলেন তার শাশুড়ি কালীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বিনা খাতুন।
পাশেই এমপি আনারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিড়িতে বসে বিলাপ করছিলেন, এমপি আনারের এক সহযোগী রুবেল হোসেন।
এমপি আনারের লাশ খণ্ডবিখণ্ড, উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
তিনি বলেন, ভারত যাওয়ার আগে তার সাথে শেষ কথা হয়। গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখো। আমি ফিরে এসে চেকগুলো সব একসাথে বিতরণ করবো। সে চলে গেলো, এখন এভাবে কে গরিব মানুষের নিয়ে ভাববে। কে আর এভাবে কথা বরবে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ। ভারত যাওয়ার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) কলকাতার নিউটাউন এলাকার আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রবিবার (১২ মে) দুপুরে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। আনার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
এমপি আনারের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
ভারতে তার মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ পাওয়ার পর তার দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমপি আনার জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোড়স্থ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই মেয়ে স্ত্রী রয়েছে।
এমপির নির্বাচনী এলাকা কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, আমরা তার মৃত্যু সংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। তার মরদেহ ভারতে পাওয়া গেছে। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। এমপির সাথে কারো কোনো বিরোধ ছিলো না। যা ছিলো তা খুবই সামান্য কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিলো অনেক।
তিনি বলেন, তার পরিবার ঢাকাতে অবস্থান করবেন। তারা ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তারা আসলে আরো কিছু জানা যাবে।
কলকাতায় এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার, যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে এমপির মরদেহ দেশে আনা হবে। আমরা এখন মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছি।
সেখানে পৌছে পশ্চিমবঙ্গে বরানগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস এ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর থকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানান উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপির ঘনিষ্ট বন্ধু ভারতের গোপাল বিশ্বাস।
এমপি আনারের বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ের সামনে আত্নীয়-স্বজন ও নেতাকর্মীদের কান্নার রোল
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিন বার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১০ বছর হলো তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। সাংসদ হিসাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সাথে দেখা করে সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোনো পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সব থেকে আলোচিত বিষয় তার নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান এবং শোকার্ত পরিবারকে স্বান্তনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত্যু ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিরল।
স্বাআলো/এস