অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ষষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান এ রায় দেন। একই রায়ে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিষয়টি জানিয়েছেন।
দণ্ডিত আবু তৈয়বের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব ধোপাছড়ি গ্রামে। হত্যার শিকার তার স্ত্রী শাহীন আক্তার একই উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের নুরুল আলমের মেয়ে।
মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা গেছে, শাহীন আক্তার আবু তৈয়বের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম সংসারে শাহীনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো। আবু তৈয়ব প্রবাসী ছিলেন। ঘটনার তিন-চার বছর আগে তিনি দেশে ফিরে বেকার অবস্থায় ছিলেন। তার সংসারে দুই মেয়ে ছিলো।
শাহীনের প্রথম সংসারের দুই ছেলে বিদেশে ছিলেন। তাদের পাঠানো টাকায় শাহীন বৈলতলীতে বাবার বাড়ির অদূরে নিজের নামে জমি কিনে একতলা পাকাঘর তৈরি করেন। স্ত্রীর নামে জমি কেনায় আবু তৈয়ব ক্ষুব্ধ হন। তিনি বারবার জমি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য শাহীনকে চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি তৈরি হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে শাহীনের বাবা নুরুল আলম প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, আবু তৈয়ব ঘরের দরজা বন্ধ করে তার মেয়েকে মারধর করছেন। খবর পেয়ে তিনি সেখানে ছুটে গিয়ে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান এবং ভেতর থেকে গোঙানির আওয়াজ শুনতে পান। দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার পর দেখেন, তার মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এবং আবু তৈয়ব নিজেই নিজেকে জখম করে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন।
প্রতিবেশিদের সহায়তায় দুইজনকে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসক শাহীনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নুরুল আলম জামাতা আবু তৈয়বকে আসামি করে চন্দনাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে শাহীনকে ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, মামলা তদন্ত করে চন্দনাইশ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল মিয়া ২০১৭ সালের ৯ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। আবু তৈয়বের দুই মেয়ে বাবার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
ঘটনার পর থেকে আসামি আবু তৈয়ব কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। পরে তাকে সাজামূলে আবারো কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত রায়ে উল্লিখিত মৃত্যুদণ্ডের নথি সাতদিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জেলা পিপি জানান।
স্বাআলো/এসএ