যশোরে শিশু পাচার মামলায় ২০ বছর পর রিকশা চালকের যাবজ্জীবন

| July 31, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের মুন্না নামে এক শিশুকে পাচার মামলার রায় দিয়েছেন আদালত।

দীর্ঘ ২০ বছর পর আসামি রিকশা চালক তাজুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কবির এই রায় দিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত তাজু ময়মনসিংহ শহরের আংকা মোড়লপাড়ার আব্দুল খানের ছেলে।

রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সেতারা খাতুন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের পাশের মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ সাধুর ছেলে মুন্না ওই এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ করতো। ওই গ্যারেজে আসতেন আসামি তাজু। এক পর্যায় কৌশলে ২০০৩ সালের ৯ জুন মুন্নাকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান আসামি তাজু। পরবর্তীতে তাকে ভারতে পাচার করে দেন তাজু। যা মুন্নার পরিবার একটি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে জানতে পারে। ২০০৩ সালের ১০ জুন ভারতীয় বিএসএফ পাচারকারী তাজুকে আটক ও শিশু মুন্নাকে উদ্ধার করে ভারতের কৃষ্ণনগর থানায় সোপর্দ করে। ভারতের আদালত পাচারকারী তাজুকে কারাগারে ও শিশু মুন্নাকে আড়িয়ালদহের ধ্রুব আশ্রমে রাখার আদেশ দেয়। মুন্নাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবার। এর মাঝে ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুন্না অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক তাকে পশ্চিমবঙ্গের আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করে কর্তপক্ষ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ সেপ্টেম্বর শিশু মুন্না মারা যায়। ভারতীয় প্রশাসন আইনি প্রক্রিয়া শেষে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মুন্নার মরদেহ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হস্তান্তর করে পরিবারের কাছে।

এ ঘটনার ৮ বছর পর শিশু মুন্নাকে ভারতে পাচারের অভিযোগে পাচারকারী তাজুকে আসামি দিয়ে তার বাবা মোহাম্মদ আলী কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে আসামি তাজু ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় আসামির অব্যহতি চেয়ে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। চুড়ান্ত রিপোর্টের উপর শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ না রাজি আবেদন করায় আসামি তাজুকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন ও সাক্ষী গ্রহণের দিন ধার্য হয় করে আদালত।

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি তাজুর বিরুদ্ধে শিশু মুন্নাকে পাচারের সত্যতা পাওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাজু পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

স্বাআলো/এস