জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: জেলা সদর উপজেলাধীন পূর্ব বাদুড়াা আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নাজিম উদ্দিনের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)।
রবিবার (১৯ মে) প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় প্রিন্সিপাল নাজিম ও তার সহযোগী একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক জাহিদ হোসেন, শামীম সিকদার ও রাসেল একত্রে হামলা চালায় সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীরের উপর।
হামলার শিকার পূর্ব বাদুড়া আলিম মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল বিভিন্ন ভাবে আমাকে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে আসছে।
আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে রোববার আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মিলনায়তনের মধ্যে সব শিক্ষকদের সামনে হঠাৎ করেই তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে এলোপাথারি হামলা চালায়। আমাকে তারা মারতে মারতে চেয়ার টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে ফেলে। এক পর্যায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমি হাসপাতালে ভর্তি। এর আগেও অনেক বার প্রিন্সিপাল আমাকে হুমকি ধামকি দিয়েছেন। এমনকি আমার প্রান নাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মোলভী ও প্রত্যক্ষদর্শীর আবুল কাশেম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে আজকে একটি ব্যাংক রেজুলেশনে স্বাক্ষর দেয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের প্রিন্সিপাল সবাইকে ব্যাংক রেজুলেশনে স্বাক্ষর দিতে বলে, তখন আমরা সেটাতে রাজি হই না। এ ঘটনা প্রিন্সিপাল হঠাৎ করেই আমাদের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর স্যারকে চর থাপ্পড় দিতে শুরু করে। পরে তার সাথের আরো কয়েকজন এসে জাহাঙ্গীর স্যারের উপর হামলা চালায়। এর আগে আমার সাথেও টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে প্রিন্সিপালের সাথে তখনও তার এই বাহিনীর লোকজন আমাকে অপদস্থ করেছিলো। এসময় আমাদের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিলকিস জাহান, মহিবুল্লাহ স্যার, রিয়াজ স্যার সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম এর স্ত্রী ও বড় আউয়ালিয়াপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাশিদা বেগম জানান, বেলা পৌনে ১টার দিকে তার কাছে ফোন আসে যে, তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়টি তিনি তার নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদকে জানালে তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালকে ফোন করেন। তখন তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল মাওলানা নাজিম উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীরের কিছু হয়নি তিনি সুস্থ আছেন। এরপরে ও রাশিদা বেগম তার স্বামীর প্রতিষ্ঠানে যান। তিনি সেখানে গিয়ে তার স্বামীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। পরে অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ ঘটনা তিনি পুলিশকে অবহিত করেছেন ও তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এবিষয় অভিযুক্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা নাজিম উদ্দিন এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে কেটে দেন ও পরবর্তীতে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সভাপতি হুমায়ুন কবির জানান, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে মুহূর্তে সকল প্রকার আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পটুয়াখালী সদর থানার ওসি জসিম বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।
লিখিত অফিযোগের পরিপেক্ষিতে সাঠক তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূর্ব বাদুড়া আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও আউলিয়াপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সভাপতি মাওলানা নাজিম উদ্দিন এর বিরুদ্ধে এ ঘটনা ছাড়াও রয়েছে নানা অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশে হামলা ও রায়হান নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে পটুয়াখালী সদর থানায় ২০২৩ সালের ২১ মে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও ২০২২ সালের ০৫ আগস্ট বাদুড়া এলাকার তাইন সিকদার নামের এক ব্যক্তিকে মারধর ও তার থেকে নব্বই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় এজাহার ভুক্ত আসামি।
স্বাআলো/এস