রাজনীতি

জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | May 30, 2025

আজ ৩০ মে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত হন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই রাষ্ট্রনায়ক। ক্ষণজন্মা এই নেতার বয়স হয়েছিল তখন মাত্র ৪৫ বছর। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি ৮ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

গত প্রায় দেড় দশক ধরে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর এই দিনটি পালন করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল বিএনপি। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার ভারত গমনের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার দীর্ঘ সময় পর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি।

জিয়াউর রহমান তার কর্মবহুল জীবন এবং বহুমাত্রিক প্রতিভা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম, এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তা তাকে গণমানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় করে তুলেছিল। একজন পেশাদার সৈনিক হয়েও সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ঈর্ষণীয়। মাত্র ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও এই সময়ে তিনি জনগণের প্রবল আস্থা অর্জন করেছিলেন, যা তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট ছিল।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। সামরিক জীবনে তিনি একদিকে যেমন ছিলেন কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ, তেমনি বিভিন্ন জাতীয় সংকটে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং বিশ্বসম্প্রদায়কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থনের আবেদন জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরউত্তম’ খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানে গৃহবন্দি হওয়ার পর ইতিহাসের এক অনিশ্চিত মুহূর্তে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লবে তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি জাতির জাগরণে নিজেকে নিবেদিত করেন।

জিয়াউর রহমান তার ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা এবং দেশপ্রেম দিয়ে জাতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান এবং ঐক্যের রাজনীতি প্রবর্তন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ একত্রিত হয় এবং এটি একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সামরিক পটভূমি থেকে এসেও তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। তার ছয় বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে মুক্ত হতে শুরু করে এবং বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস পায়। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান ছিল প্রশংসিত।

দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক বাণীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি:

জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া বিএনপির ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি আগামী ২ জুন পর্যন্ত চলবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শাহাদাতবার্ষিকীর মূল দিনে আজ শুক্রবার ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এছাড়াও আলোচনা সভা, মসজিদে মসজিদে গণদোয়া এবং দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিশেষ পোস্টার প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সারা দেশের জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌর ইউনিটগুলোও অনুরূপ আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল এবং ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি পালন করবে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo