১২ কাউন্সিলরের অনাস্থা, সাতক্ষীরা পৌরসভার ‘মেয়র’ পদ শূন্য ঘোষণা

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১২ জন কাউন্সিলরের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় ‌‘মেয়র’ পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.২৭.০০৪.২২ (অংশ-১)-১৭৩৫ স্মারকের পত্রে ‘মেয়র পদ’ শূন্য ঘোষণা করা হয়।

বরখাস্ত হওয়ায় মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব। এর আগেও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাকে তিনবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, একই সঙ্গে আরো দুইটি পত্রে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র এর শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন মেয়র কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র) কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া এবং বিধিবহির্ভূতভাবে পৌরসভার ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার সংলগ্ন জমিতে মার্কেট নির্মাণের দরপত্র আহবানসহ ১০ দফা অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১২ কাউন্সিলর গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা; ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নূরজাহান এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাবেয়া পারভীন অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে কোনো ধরনের প্রশাসনিক কিংবা রাজনৈতিক চাপ ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, মেয়র তাজকিন আহমেদ তাদের কোনো কথা শুনতেন না। তাদের মূল্যায়ন করতেন না। তিনি কাউন্সিলরদের কোনো মতামত না নিয়ে একক সিদ্ধান্তে পরিষদ চালাতেন।

জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ মতো তিনি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’ এর পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যধারা কেন গ্রহণ করা হবে না, এ মর্মে এই চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাজকিন আহমেদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠির জবাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না দেয়ায় কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাব সম্পর্কিত সভা ডাকার আহবান জানান।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদকক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে, অনাস্থা প্রস্তাবটি পৌরসভার মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৮ (১২) অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র এর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের তিনটি পত্র পেয়েছি। প্রথম পত্রে মেয়র এর পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পত্রে প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করা হয় এবং তৃতীয় পত্রে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৩(২) ধারা অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য সচিব নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর পত্র প্রদান করা হয়েছে। এখন, আইন ও বিধি অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানিকে শর্ত আরোপ

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানিতে নতুন শর্ত জারি করা...

ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে যতদিন

আবারো আসছে হাড়কাঁপানো শীত। আগামীকাল বুধবার (৮ জানুয়ারি) সারাদেশে...

যশোরে গাছের ডাল কাটতে গিয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

যশোর সদরের রুপদিয়ার বিলপাড়ায় কড়াই গাছের ডাল কাটার সময়...

থানা থেকে লুট হওয়া রাইফেল মিললো খাল পাড়ে

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের লুট হওয়া...