মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে কী জ্বলছে?

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা নতুন নয়। কিন্তু আজকের ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ যা গাজা থেকে তেহরান পর্যন্ত বিস্তৃত, তা শুধুই দুই রাষ্ট্রের সংঘর্ষ নয় এ এক ভয়াবহ মানবিক, রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। পঞ্চম দিনের মতো চলছে মিসাইলের আদান-প্রদান, বোমা বর্ষণ, প্রাণহানি। নিহত হয়েছেন দুই শতাধিক ইরানি নাগরিক, যার মধ্যে ৭০ জন নারী ও শিশু। অপরদিকে ইসরায়েলেও নিহত হয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। এর মাঝে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে এই যুদ্ধের আসল লক্ষ্য কী? নিরাপত্তা, প্রতিশোধ, না শাসক শ্রেণির বিজয় কৌশল?
কে কার আকাশ দখল করেছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমরা ইরানের আকাশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এর মানে কেবল প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব নয়, বরং এক ধরনের ভৌগোলিক ও নৈতিক দখলদারিত্বের ঘোষণা।
তবে এর বিপরীতে ইরানও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও তীব্র হামলা চালাতে প্রস্তুত। তেলআবিবে মোসাদ অফিসে হামলা, তেহরানে গুপ্তহত্যা—সবকিছু এক ভয়ানক ধ্বংসযজ্ঞের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতিকে।
যুদ্ধ শুরু, ইরান কখনো আপস করবে না: খামেনি
গাজা: যুদ্ধ নয়, গণহত্যা চলছে
যখন রাষ্ট্রনেতারা কৌশলগত বিজয় নিয়ে তর্ক করেন, তখন গাজার আকাশে উড়ছে ক্ষুধার্ত শিশুদের হাহাকার। একদিকে চলছে “মিসাইল ডিপ্লোম্যাসি”, অন্যদিকে গাজায় খাদ্য নিতে আসা মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলি সেনারা।
৫৫ হাজারেরও বেশি প্রাণ ঝরে গেছে। এর নাম যুদ্ধ হতে পারে না, এ এক নিখাদ গণহত্যা।
রাজনীতি না ব্যক্তিগত কৃতিত্বের খেলা?
ট্রাম্পের যুদ্ধ-উসকানিমূলক ভাষ্য, সহ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্সের হুমকি, এবং হঠাৎ সম্পূর্ণ আকাশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা, সবই ইঙ্গিত দেয় যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এটি কি সত্যিই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ঠেকাতে, না কি ভোটের বাজারে এক নায়কোচিত আবির্ভাব ঘটাতে?
প্রশ্ন উঠছে, যখন একজন রাষ্ট্রনেতা ব্যক্তিগত কৃতিত্বের জন্য যুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ করেন, তখন পুরো বিশ্ব নীরব দর্শক হয়ে থাকে কেন?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালো ২১ মুসলিম দেশ
যুদ্ধের শেষ কোথায়?
যুদ্ধের ভেতরে যারা থাকে, তারা মানুষ। শাসকেরা হয়তো মানচিত্রে রেখা টানেন, কিন্তু সেই রেখার দুই পাশে কেবল মৃত্যু, ক্ষুধা, ভাঙন।
একটি গুজব, একটুখানি উস্কানি, কিছু ড্রোন, আর কিছু রাজনৈতিক হিসাব তার জন্য মূল্য দিতে হয় লাখো পরিবারকে।
আজ যদি বিশ্ব বিবেক জাগে না, আজ যদি গাজা, তেহরান ও তেলআবিবে রক্তের গন্ধেই বিশ্বশক্তির চোখ না খোলে, তবে কাল হয়তো এই আগুন ছড়িয়ে পড়বে আরো বিস্তৃত আকাশে।
স্বাআলো/এস