১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর রাজাকাররা রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে যশোরের মণিরামপুরের পাঁচজনকে। এ দিন শহীদ হয়েছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন খান মানিক, আশিকুর রহমান তোজো ও বজলুর রহমান বজলু।
ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনো সাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন চিনাটোলা বাজারের মুটে ব্যবসায়ী শ্যামাপদ নাথ। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রত্মেস্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ছয় যুবক। কিন্তু হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেননি তারা। রাজাকাররা ছয় যুবককে ধরে নিয়ে যায়। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় আনা হয় মণিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেয়া হয়। অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত ৮টার দিকে নেয়া হয় সৈয়দ মাহমুদপুর গ্রামসংলগ্ন হরিহর নদের তীরবর্তী স্থানে। সেখান থেকে নদীতে লাফ দিয়ে একজন পালিয়ে যান। কিন্তু রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি অপর পাঁচ যুবক। কিছুক্ষণ পর বাঁশি বাজতেই বন্দুকের কয়েকটি গুলির আওয়াজ শোনা যায়। একে একে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নদীর তীরে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়, পর দিন সকালে সেখানে তাদের সমাহিত করা হয়।
দিনটি স্মরণ করতে পরিচ্ছন্ন ও রঙ করানো হয়েছে শহীদদের সমাধিস্থল। রবিবার (২২ অক্টোবর) ধোয়ামোছার কাজ করছিলেন ওমর আলী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি সিরাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছনতার কাজ করে আসছেন।
মণিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবদুল হামিদ বলেন, সরকারিভাবে পাঁচ বীরকে মনে রাখা হয় না। শুধু ফজলুকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেয়া হয়েছে। তিনি অন্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠানোর দাবি জানান। একই সঙ্গে এদেরকে স্মরণ করতে সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উদ্যোগ নিতে বলেন আবদুল হামিদ।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলা উদ্দিন বলেন, স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির কর্মসূচিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিয়ে থাকি। উপজেলার সব শহীদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে বলা হবে।
সোমবার পাঁচ শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে ওই বধ্যভূমিতে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
স্বাআলো/এসএ