নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: জীবিত আনারের থেকে মৃত আনার অনেক বেশি শক্তিশালী। আজকের প্রতিবাদ সভায় হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি সেটাই প্রমান করে। কালীগঞ্জের প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকারে মধ্য দিয়ে এমপি আনার আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর রাজনীতিতে জয়ী হতে না পেরে গভীর ষড়যন্ত্র মাধ্যমে এমপি আনারকে ঈর্শম্বিত হয়ে যারা তাকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ফাঁসির দাবি করছি।
রবিবার (২৩ জুন) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মেইন বাসটার্মিনালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় এমপি আনার কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, আমার বাবা হত্যা জন্য আমি কাউকে সন্দেহ করিনি। কারো নামও প্রকাশ করিনি। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে হত্যাকারী বা ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করেছে। তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।
তারাই আমার বাবা হত্যার সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেছে। গ্যাস বাবু ও শিমুল ভুঁইয়ার ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু চাচার নাম উঠে এসেছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন।
কিন্তু তিনদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর কেন তাকে কারাগারে পাঠানো হলো? তাহলে এর পিছনে কি কোন রহস্য রয়েছে নাকি কোন চাপ আছে? কোন ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার দল নিবে না। তাই আজকের এই প্রতিবাদ সভায় আমরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে ‘গ্যাস বাবু’র বহিস্কার দাবি করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় এমপি কন্যা ডরিন তার পিতার হত্যার ছবি দেখিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও কান্নাকাটি করেন। সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সে সময় ডরিন বলেন, আপনি ( জেলা সেক্রেটারি সাইদুল করিম মিন্টু) ১৬ তারিখে আমার বাবার হত্যা ছবি পেয়েছেন। তখন আমার বাবা নিখোঁজের ঘটনায় দিশেহারা ছিলাম। গোয়েন্দাসহ সকল প্রশাসন তার নিখোঁজের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। অথচ আপনি সবকিছু জেনেও তা গোপন করেছেন। পরে এসে আমাকে শান্তনা দিয়েছেন।
তাহলে এসব কি ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক আইওয়াশ ছিল?
তিনি স্থানীয় ষড়যন্ত্র কারীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশ্য জনসভায় আপনি (সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু) আমার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন পা পিছলে গেলে বাংলাদেশের মাটিতে আপনি (এমপি) আর থাকতে পারবেন না। তাহলে কি আমার বাবাকে ষড়যন্ত্র করে ইন্ডিয়া নিয়ে হত্যা করেছেন? এক বছর আগে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন? আপনারা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা শেষে এখন সোনা চোরাচালানের অপবাদ দিচ্ছেন।
প্রতিবাদ সভায় কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় আমরা কারো না বলিনি। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতার করতে করতে গোয়েন্দারা ঝিনাইদহ পর্যন্ত চলে এসেছে। কালীগঞ্জেও চলে আসতে বেশি সময় লাগবে না। কারন এমপি আনার হত্যার অর্থের যোগানদাতাদের মধ্যে কালীগঞ্জেরও কেউ কেউ থাকতে পারেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ সমশের, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান রাসেল, রাখালগাছি ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু, সিমলা রোকনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির চৌধুরী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, ঘোড়শাল ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিল্টন, আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।
আ’লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় কালীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাআলো/এস/বি