জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট: প্রকল্প গ্রহনের ১৩ বছর পর অবশেষে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাগেরহাটের মোংলা বন্দর। বেনাপোলস্থল বন্দর থেকে ৬০০ যাত্রী নিয়ে শনিবার (১ জুন) মোংলাবন্দর প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায় মোংলা এক্সপ্রেস নামের নতুন একটি কমিউটার ট্রেন।
এ সময় মোংলায় আসা নতুন ট্রেনটিকে স্বাগত জানান, স্থানীয সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার ও মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নাসহ রেল কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা নতুন ট্রেনটি পথিমধ্যে নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চে্গংুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা,খুলনার ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, বাগেরহাটের কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর মোংলায় আসে। এরপ এই ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে মোংলা ছেড়ে যায়।
কাল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
কমিউটার ট্রেনটি মোংলায় এসে পৌঁছালে এই এলাকার মানুষে মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। অনেকে এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এ সময় অনুভূতি জানতে চাইলে, আব্দুস সালাম নামে এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম কখন মোংলা থেকে ট্রেন চলবে, আজ আশা পূরণ হলো। নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। সুস্মিতা বালা নামে একজন নারী যাত্রী বলেন, মোংলা থেকে ফুলতলা যাবো, এ জন্য সকাল ১০টায় এসে স্বপরিবারে বসে ছিলাম। খরচ কম এবং আরামদায়ক ভ্রমন উপভোগ করবো। তাদের মতো শত শত অনেক যাত্রী নতুন ট্রেনে উঠবে বলে মোংলা প্লাটফর্মে এদিন অপেক্ষায় ছিলেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ফের চালু হচ্ছে ১২ জুন
এদিকে এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণসহ দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে জানিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে। এতে করে খুলনা-মোংলা রেল পথ ঘিরে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলবে। ঢাকার সাথে সহজ হবে মোংলা বন্দরের সাথে যোগাযোগ। একই সাথে এই বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে কম খরচে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এছাড়া বহুল কাঙ্খিত এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সাথে ভারত, ভূটান ও নেপালের ব্যবসা বানিজ্য প্রসারিত হবে’ বলেও জানান তিনি। মোংলা রেল ষ্টেশন মাষ্টার এস এম মনির আহম্মেদ বলেন গত বছরের ১ নভেম্বর এই রেলপথ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্সুয়ালি উদ্ধোধন করেন। এর ৭ মাস পর খুলনা-মোংলা রেলপথে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
বেনাপোল-মোংলা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু
এই পথে মঙ্গলবার বন্ধ রেখে সপ্তাহে ছয়দিন চলবে মোংলা এক্সপ্রেস নামের একটি কমিউটার ট্রেন। ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে মোংলা-চুলকাঠি ২০ টাকা, মোংলা-কাটাখালি ২০ টাকা, মোংলা-মোহাম্মদনগর ৩৫ টাকা, মোংলা-ফুলতলা ৪৫ টাকা, মোংলা-নওয়াপাড়া ৫৫ টাকা, মোংলা-সিঙ্গিয়া ৬০ টাকা, মোংলা-যশোর ৬৫ টাকা, মোংলা-ঝিকরগাছা ৭৫ টাকা, মোংলা-নাভারন ৮০ টাকা এবং মোংলা-বেনাপোল ৮৫ টাকা।
ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মানের প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও পাঁচ দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে রুপসা নদীর ওপর পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার একটি রেলসেতু, ১০ টি ছোট বড় কালভার্ট, আটটি প্লাটফর্ম ও ৯টি আন্ডারপাস। চার হাজার ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অবশেষে পূর্ণতা পেল বাগেরহাটের-মোংলা-খুলনা ও যশোর বেনাপোল রেলপথ।
স্বাআলো/এস