রেকর্ড বৃষ্টিতে প্লাবিত নিচু এলাকা, দুর্ভোগে মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে, যা চলতি মৌসুমে জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ। এই রেকর্ড বৃষ্টি এবং নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলার উপকূলীয় ও নিচু এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম শুক্রবার সকালে জানান, গভীর নিম্নচাপের কারণে আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত উত্তাল রয়েছে এবং বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। নদ-নদীর পানিও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের প্রবল তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার কয়েকটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে। অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে এবং ডুবে গেছে ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল। হাতিয়ার মেঘনা নদীতে এমভি প্রাহিম নামের একটি পণ্যবাহী ট্রলার প্রায় চার কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় এলাকায় বর্তমানে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে।
বন্যার শঙ্কা, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে দ্বীপের মানুষ এবং জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণগুলো দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়াও হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানির আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোমিন বাবলু জানান, লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সকালেও হাতিয়াতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় তৃতীয় দিনের মতো হাতিয়ার সাথে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ব্যাপক প্লাবিত হয়েছে। সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো ডুবে গেছে এবং নিচু অঞ্চলের বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজে জোয়ারের পানি ঢুকে নিঝুমদ্বীপ প্লাবিত হয়, এতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হওয়া সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক এবং হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। এছাড়াও সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেডক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে তিনি জানান।
স্বাআলো/এস