আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত আটককৃত ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে বিচারের জন্য মুম্বাইয়ে নিয়ে গেছে। দেশটির নৌবাহিনী একটি ছিনতাইকৃত কার্গো জাহাজ পুনরুদ্ধার এবং বেশ কিছু জিম্মিকে উদ্ধার করার কয়েক দিন পর এ খবর এলো। এদিন পরে তাদের পুলিশ হেফাজতে স্থানান্তর করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বদানকারী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতার স্থানীয় সময় শনিবার (২৩ মার্চ) ভোরে ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানীতে নোঙর করেছে।
২০১৭ সালের পর রুয়েনই প্রথম কোনো জাহাজ, যেটি সোমালি জলদস্যুরা সফলভাবে ছিনতাই করতে পেরেছে। আরব সাগরের উত্তরাঞ্চলে সোকোত্রার পূর্বে ডিসেম্বরে মাল্টিজ পতাকাবাহী এমভি রুয়েন ছিনতাই করে তারা। ভারতীয় নৌ কমান্ডোরা ১৭ মার্চ সোমালিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দূরে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ১৭ জন ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করে, যার মধ্যে মিয়ানমারের ৯ জন, বুলগেরিয়ার সাতজন এবং অ্যাঙ্গোলার একজন।
নৌবাহিনীর আগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমান্ডোরা একটি সামরিক সি-১৭ বিমান থেকে প্যারাশুটে করে জাহাজে নামেন এবং আক্রমণ চালিয়ে ৩৫ জন জলদস্যুকে আত্মসমর্পণ করতে সফলভাবে বাধ্য করেন। বুলগেরীয় জাহাজের মালিক নাভিবুলগার ভারতের এ উদ্ধার অভিযানকে একটি ‘বড় সাফল্য’ বলেছেন।
সোমালি জলদস্যুদের আক্রমণের শীর্ষে থাকা ২০১১ সালে নৌবাহিনী জড়িতদের ভারতে নিয়ে বিচার করতো ও কারাগারে রাখত। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নৌবাহিনী জাহাজগুলো পুনরুদ্ধার ও ক্রুদের উদ্ধার করার উদ্যোগ নিলেও নিরস্ত্র জলদস্যুদের সমুদ্রে ছেড়ে দিয়েছে।
নৌবাহিনীর মুখপাত্র বিবেক মাধওয়াল এই সপ্তাহে বলেছিলেন, এক দশকেরো বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো সমুদ্রে আটক জলদস্যুদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতীয় উপকূলে আনা হবে। ভারতের জলদস্যুতাবিরোধী আইনের অধীনে পুরুষদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, যদি তারা হত্যা বা হত্যাচেষ্টার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়। তবে শুধু জলদস্যুতার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
ভারতের নৌবাহিনীর সদস্যদের ২০০৮ সাল থেকে ক্রমাগত সোমালিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু আরব সাগর ও লোহিত সাগরে ইয়েমেনের ইরান সম্পর্কিত হুতি বিদ্রোহীদের সামুদ্রিক হামলা বৃদ্ধির পর গত বছর জলদস্যুতাবিরোধী প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।
ভারত ডিসেম্বর থেকে এডেন উপসাগর ও উত্তর আরব সাগরে কমপক্ষে এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। এতে তারা লোহিত সাগরের পূর্বে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে।
জানুয়ারিতে আরব সাগরে ছিনতাইয়ের চেষ্টার পর নৌবাহিনী লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী একটি বণিক জাহাজ থেকে সব ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করে। ১ ডিসেম্বর থেকে ছিনতাই, ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও সন্দেহজনক পদ্ধতির অন্তত ১৭টি ঘটনা রেকর্ড করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইরানের পতাকাবাহী তিনটি মাছ ধরার জাহাজ উদ্ধারের অভিযানসহ এই বছর ভারতের নৌবাহিনী কমপক্ষে ১৮ জন সন্দেহভাজন জলদস্যুকে আটক করেছে। তবে এদের পরিণতি সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ্যে প্রকাশ করা হয়নি।
স্বাআলো/এস