সম্পাদকীয়: গত আট মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জোয়ার বইছে। ‘নিউক্লিয়াস পার্টি’ থেকে শুরু করে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’- কমপক্ষে ২৬টি দল আত্মপ্রকাশ করেছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে। এর মধ্যে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত সাম্প্রতিক দলটি মিডিয়ার মনোযোগ কেড়েছে।
এত অল্প সময়ে এতগুলো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ নিঃসন্দেহে সাধারণ নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগায়। এ কি গণতন্ত্রের অগ্রগতি, না কি নেপথ্যের কোনো সুবিধাবাদী খেলা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নতুন কিছু নয়। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ‘ব্যাঙের ছাতার মতো’ রাজনৈতিক দল গজিয়ে ওঠে। লক্ষ্য—নির্বাচনী মাঠে নিজেরা সুযোগ নেওয়া বা বড় দলের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতার ভাগীদার হওয়া। এই প্রবণতা গণতন্ত্রের বহুমাত্রিকতাকে প্রতিনিধিত্ব করলেও এর পেছনে রাজনৈতিক আদর্শ ও জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ ও কৌশলী অবস্থান গ্রহণই বেশি গুরুত্ব পায়।
এছাড়া, এমন দলগুলো অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে ভোটারদের মাঝে। প্রকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, কর্মসূচি বা সংগঠনিক ভিত্তি ছাড়াই এসব দল নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তাদের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকে।
তবে এই চিত্রের এক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, জনগণ এখন রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী, বিকল্প নেতৃত্ব চায়। প্রশ্ন হলো- এই নতুন নেতৃত্ব সত্যিই জনতার পক্ষে দাঁড়াবে, না কি বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুকরণেই চলবে?
আমরা আশা করবো, যে নেতারা নতুন দল গঠন করছেন, তারা কেবল নির্বাচনী মোসাহেবি বা ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশের আশায় নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইবেন। আর নাগরিকদের উচিত সচেতনভাবে যাচাই করে প্রতিটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে মূল্যায়ন করা।
গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নির্ভর করে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বে নকল চেহারার ভিড়ে সত্যিকারের নেতৃত্ব যেন না হারিয়ে যায়, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাআলো/এস