গত শীত মৌসুম ও রমজানের আগে-পরে যশোরের বাজারে সবজির দামে যে স্বস্তি ফিরেছিলো, তা এখন উধাও। তিন-চার মাস ধরে তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারলেও, বর্তমানে যশোরের বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দামই কেজি প্রতি ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিছু কিছু সবজি ১০০ টাকার ঘরও অতিক্রম করেছে, ফলে সবজি বাজারে ক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
বুধবার (৭ মে) সবজির দোকানগুলোতে বেগুন, করলা, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়শসহ অন্যান্য সবজি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অধিকাংশটির দামই কেজি প্রতি ৮০ টাকা বা তার বেশি। বিশেষ করে বরবটি, কচুর লতি, পটল, ঝিঙে, বেগুন, কচুর মুখি ও শালগম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর ঘাটকোল ও সজনের ডাঁটার দাম আকাশছোঁয়া, মানভেদে এ দুইটি সবজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম দামে, অর্থাৎ ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে করলা, লাউ, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়স ও পেঁপে। বাজারে সবচেয়ে কম দামের সবজি এখন টমেটো, যা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এছাড়া, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি এবং কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
যশোরের বড় বাজারে সুতার দোকানে আগুন
খড়কি হাজামপাড়ার বাসিন্দা ও রিকশা চালক রহমান বলেন, সবজির দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। হিসেব করে বাজার করতে হচ্ছে।
উপশহর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত ঝন্টু দফাদার বলেন, সামান্য বেতনে চাকরি করি। কয়েক মাস বেশ ভালোই ছিলাম, কাঁচাবাজারের জিনিসপত্রের দাম সাধ্যের মধ্যে ছিলো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে সবজির দাম বেশ চড়া। তাই বাজার করতে গিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।

সরকারি এমএম কলেজের পাশে বস্তিতে বসবাসকারী ফাহিমা বেগম ছাত্রমেসে রান্না করে সংসার চালান।
তিনি বলেন, ছাপোষা মানুষ, তেমন আয়-উপার্জন নেই। সংসারে চার সন্তান, স্বামী নেই। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন ও সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপদের শেষ নেই, শান্তিমতো তরকারিও কিনতে পারছি না।
আবু হোসেন নামে আরেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও দাম বাড়ার একটি বড় কারণ। এছাড়া, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে সবজি কেনেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে পরে তারা বিক্রি করেন। এর ওপর প্রশাসনের নজরদারি ঠিকমতো করা হচ্ছে না।
যশোরে ভোর হতেই জেগে ওঠে ধান কাটা শ্রমিকের হাট
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিক্রেতারা পাইকারি বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বাড়তি পরিবহন খরচকে দায়ী করছেন। বড়বাজারের সবজি বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, “আমরা বেশি দামে কিনলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত কয়েক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পটল, বরবটি, বেগুনের দাম বেশ চড়া। আমাদের কেনা দাম বেশি হলে কম লাভে বিক্রি করতে পারি না। তাছাড়া, শীতের পর আগের মতো এখন আর সহজে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যে সবজিগুলো বাজারে আসছে, সেগুলোর চাষের খরচও শীতের সবজির চেয়ে বেশি, সেজন্য দামও বেশি।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, শীতকালে নানা ধরনের সবজি পাওয়া যায়, তাই তুলনামূলকভাবে দামও কম থাকে। বর্ষার সময়ে উৎপাদন কম হয়, সবজির গাছ বিভিন্ন কারণে মারা যায়, তাই দামও বেড়ে যায়। এখন দেখার বিষয় ঠিক কী কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। যদি উৎপাদনের ঘাটতির কারণে দাম বেড়ে যায়, সেটি এক রকম আর ব্যবসায়ীরা যদি কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে, সেটি ভিন্ন রকম। সবজির বড় বড় আড়তগুলোতে অভিযান চালানো হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাআলো/এস