দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের স্থানীয় শিল্পের জন্য দেয়া ‘অতিরিক্ত সুরক্ষা’ সুবিধা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছে। এর ফলে ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফ্রিজ, এসিসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বাজারে দাম বাড়তে পারে, যা সীমিত আয়ের ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগজনক।
এত দিন দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছিলো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, অন্তবর্তী সরকারের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার এসব খাতে অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেশার কুকারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী পাঁচ বছরে তিন ধাপে এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হবে, যা ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এরপরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত ভ্যাট বেড়ে হবে সাড়ে ৭ শতাংশ, এবং ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত তা আরো বেড়ে ১০ শতাংশ হবে। তবে এই সময়ে এসব পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে।
আজ বাজেট ঘোষণা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব আদায়ই মূল চ্যালেঞ্জ
অন্যদিকে, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসি ও কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে সরকার আরো কঠোর হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এবং ২০১৯ সাল থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসা এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ের বিদ্যমান অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর অর্থ হলো, এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে এখন ভ্যাট (আগাম করসহ) দিতে হবে। যদিও বিদ্যমান বিনিয়োগ বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া, মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে ২ থেকে আড়াই শতাংশ বাড়ানো হতে পারে, যা দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়াতে পারে। আয়রন বা স্টিলের এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বর্তমান সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
স্থানীয়ভাবে লিফট উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান মূসক অব্যাহতি সুবিধা থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ মূসক আরোপ হবে, যা ধাপে ধাপে বেড়ে ২০৩০ সালের জুন নাগাদ ১০ শতাংশ হবে। তবে ৩০ সাল পর্যন্ত লিফটের উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের ফলে দেশে তৈরি হওয়া গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যার ফলে বাজারে দাম বাড়তে পারে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় এসব পণ্য কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। সরকারের এই পদক্ষেপ রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক হলেও দেশীয় শিল্পের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
স্বাআলো/এস