সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু, বিপাকে বনজীবীরা

পহেলা জুন থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ ও জীবিকা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাছ, কাঁকড়া ও অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে জারি করা এই ৯২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার বনজীবীকে বিপাকে ফেলেছে। সুন্দরবন ভ্রমণ, মাছ-কাঁকড়া শিকার ও মধু আহরণ সহ সব ধরনের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, ট্যুর অপারেটর ও বোটচালকসহ বনজীবীরা কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা বলছেন, বন্ধের দিনগুলোতে তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেছে, সুন্দরবন থেকে মাছ ধরা নৌকাগুলো লোকালয়ে ফিরতে শুরু করেছে। জেলেরা নৌকা থেকে মাছ ধরার জালসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার নৌকা মেরামত করার জন্য বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর উঠিয়ে রাখছেন।
নীলডুমুর এলাকার বাসিন্দা ও সুন্দরবনের মাছধরা জেলে আল আমিন বলেন, টানা ছয়দিন সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ ধরে সকালে লোকালয়ে ফিরেছি। খুব বেশি মাছ ধরতে পারিনি। সামনের ৯২ দিন বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই। এ নিয়ে বিপদে আছি।
ঈদুল আজহা: সাতক্ষীরায় র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ২৩ হাজার ৯২৮ জন। তবে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তার চাল পাবেন মাত্র ৮ হাজার ৩২৪ জন নিবন্ধিত জেলে। এই জেলেরা তিন মাসে দুই ধাপে মোট ৭৭ কেজি করে চাল সহায়তা পাবেন।
জেলে জলিল গাজী সরকারি সহায়তার অপ্রতুলতা এবং প্রকৃত বনজীবীদের সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করে বলেন, এই তিন মাস পাস বন্ধ হওয়ার কথা না। কিসের জন্য এই তিন মাস পাস বন্ধ হবে? এসময় কাঁকড়া ডিমও দেয় না, বাচ্চা ও ফোটায় না। পাস বন্ধ হবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি, ঐসময় কাঁকড়া ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়।
তিনি অভিযোগ করেন, এই তিন মাস ফরেস্টারা ইচ্ছামতো বন্ধ করে। পাস বন্ধ থাকলে সমিতির কাছ থেকে সুদ করে টাকা নিতে হয়, দিন আনা দিন খাওয়া আমাদের খুব কষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরও দাবি করেন, যাদের বিএলসি আছে তাদের অধিকাংশই প্রভাবশালী ও বিত্তবান এবং তারা নামে-বেনামে একাধিক বিএলসি করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে খায়, অথচ যারা প্রকৃত বনজীবী তারা কোনো সরকারি সহায়তা পায় না।
এদিকে, এই নিষেধাজ্ঞা ‘লোক দেখানো’ উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বনজীবী বলেন, জীবিকা নির্বাহ করেন এমন বনজীবীদের প্রবেশ বন্ধ থাকলেও গভীর সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এই সময় অবৈধ মাছ শিকারের সুযোগ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাটা কিন্তু গোটা সুন্দরবনে। এ কারণে বনের ভেতরের নদী-খালে সাধারণ জেলেরা যেতে পারেন না। কিন্তু যারা গভীর সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরেন, তাদের জন্য কিন্তু এ সময়টা সুবর্ণ সুযোগ। কারণ, তখন সাধারণ জেলেরা থাকে না, মানুষ থাকে না। খুব সহজেই তারা ঢুকে যেতে পারে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী হাবিবুর রহমান জানান, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস সুন্দরবন থেকে সব ধরনের সম্পদ আহরণ ও ইকো ট্যুরিজম বন্ধ থাকবে। বনবিভাগের সকল অফিস থেকে ২৬ মে থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের পাস (অনুমতিপত্র) প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। একই সাথে আগে পাস নিয়ে এখনো যারা সুন্দরবনে অবস্থান করছে, তাদের ৩১ মের মধ্যে লোকালয়ে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, সুন্দরবনের প্রকৃতি ও জীব-প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর তিন মাস এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং এই সময় বেকার সুন্দরবন যাতায়াতকারী জেলেরা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল পাবে।
স্বাআলো/এস