খুলনা বিভাগ

বৃষ্টিতে ভেসেছে যশোরের সড়ক-মহাসড়ক: জনদুর্ভোগ চরমে, স্থবির বাণিজ্য

রুহুল আমিন, যশোর রুহুল আমিন, যশোর | July 15, 2025

গত পাঁচদিনের টানা বর্ষণে যশোরের সড়ক ও মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা আরো প্রকট হয়েছে। জেলার প্রধান সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কাদা ও হাঁটু পানিতে সয়লাব রাস্তাঘাট মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ায় একদিকে যেমন যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে, তেমনি স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য।

যদিও সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, সংস্কার ও ঢালাই রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে, তবে স্থায়ী সমাধান পেতে আরো বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

যশোর-খুলনা মহাসড়ক: যেনো এক মৃত্যু ফাঁদ

দেখা গেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের বসুন্দিয়া থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শত শত গর্ত আর কাদায় একাকার এই সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এই মহাসড়কটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, নওয়াপাড়া নদীবন্দর এবং মোংলা বন্দরের যোগাযোগের প্রধান রুট হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও।

অভয়নগরের প্রেমবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সবুর বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে সড়কটি উন্নয়নের কাজ চলছে। কিন্তু একদিকে কাজ শেষ হতে না হতেই অন্যদিকে সড়ক আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বৃষ্টিতে ভাসছে যশোর: চরম ভোগান্তি, কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত

ট্রাকচালক রাজিব হোসেন জানান, চেঙ্গুটিয়া থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত অংশটি একেবারেই অযোগ্য। রাস্তায় হাঁটু কাদা জমে থাকায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গাড়ি ভাঙছে, উল্টে যাচ্ছে। এই সড়কে একবার ট্রিপ নিলে জ্যামে দুই-তিন দিন আটকে থাকতে হচ্ছে।

নওয়াপাড়া শিল্পনগরীর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়া গ্রুপের ম্যানেজার রাজু আহমেদ বলেন, দেশের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ সার এই বন্দরের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। ভরা মৌসুমে সড়কের এই বেহাল দশার কারণে সার সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

বেনাপোল স্থলবন্দরে অচলাবস্থা

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কাস্টমস, বন্দর ও পৌরসভা কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহিদ আলী বলেন, “আমরা বন্দরের পানি নিষ্কাশন এবং রাস্তা সংস্কারের একটি স্থায়ী সমাধান চাই।” তবে স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানিয়েছেন, স্থায়ী সমাধান করতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে।

যশোর-খুলনা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদ

নগরজুড়ে খানা-খন্দের ভোগান্তি ও কালভার্ট ধস

যশোর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তাও খানা-খন্দে ভরে গেছে। খড়কি শাহ আব্দুল করিম সড়ক, নীলগঞ্জ সড়ক, কারবালা, স্টেডিয়াম পাড়া, শংকরপুরসহ অসংখ্য এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এরই মধ্যে শহরের হযরত গরীব শাহ রোডে ১৯৬৮ সালে নির্মিত একটি পুরোনো কালভার্ট ভেঙে রাস্তার একাংশ ধসে পড়েছে। ঝুঁকি এড়াতে পৌরসভা রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় শহরের একাধিক এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, “যশোর-খুলনা মহাসড়কের কিছু অংশের মাটি খারাপ এবং ওভারলোড যানবাহন চলায় রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। বুয়েটের পরামর্শে ঢালাই রাস্তার কাজ চলছে, যা শেষ হতে আরও দেড় বছর লাগতে পারে।”

ভেঙে পড়া কালভার্ট প্রসঙ্গে যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান জানান, “পুরোনো কালভার্টটি মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। এটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহাবুব হায়দার খান জানিয়েছেন, কালভার্ট ভাঙার পাশাপাশি সেখানে পৌরসভার একটি পাইপও ফেটে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। আপাতত একপাশে পাইপ বসিয়ে মাটি ফেলে রাস্তা সচল করার চেষ্টা চলছে।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo