জাতীয়

৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন: ড. ইউনূস

ঢাকা অফিস ঢাকা অফিস | August 5, 2025

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন। তিনি বলেন, আজ আমরা পুরো জাতি একসঙ্গে এমন একটি দিনকে স্মরণ করছি, যা এ দেশের ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে দেশের সব জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও দেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সংকটময় অধ্যায় এবং ১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।”

ড. ইউনূস বলেন, “সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি, যা মূলত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির হাতিয়ার ছিল, তার বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি। দীর্ঘ এই সময়ে প্রতিটি সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল। দেশের গরিব-মেহনতি মানুষের পয়সা লুট করে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের সহযোগীরা টাকার পাহাড় গড়ে তোলে।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১৬ বছরে যারাই সরকারের সমালোচনা করেছে বা নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের গ্রেফতার অথবা গুম করা হয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেই চব্বিশের জুলাইয়ে দেশের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদকে বিদায় জানানোর ডাক দেয়।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সরকার নির্বিচারে গুলি করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য লুকাতে চেয়েছে এবং আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জাতির সূর্য সন্তান’ আখ্যা দিয়ে তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে ড. ইউনূস জানান, এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে মোট ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আহত ১৩,৮০০ জুলাই যোদ্ধাকে ১৫৩ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। ৭৮ জন গুরুতর আহত যোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে, যেখানে ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

ভাষণের শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজ আমরা কেবল অতীত স্মরণ করতে আসিনি, আমরা একটি শপথ গ্রহণ করতে এসেছি। শপথ এই যে—আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াবো না এবং একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা—আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের শপথ।”

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo