ঢাকা অফিস: জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়।
এই বাজেটে কিছু পণ্যে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট অথবা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। আবার কিছু পণ্যে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট কমানো হয়েছে, ফলে দাম কমবে এসব পণ্যের।
দাম বাড়বে যেসব পণ্যের
এলইডি ও এনার্জি সেভিং বাল্ব : বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ে দেশে বেড়েছে এলইডি বাল্বের ব্যবহার। নতুন বাজেটে এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এলইডি বাল্বের দাম বাড়তে পারে।
তামাক পণ্য : সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তাই সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে জর্দা ও গুলের। তবে অপরিবর্তিত থাকবে বিড়ির দাম।
মুঠোফোন ও ইন্টারনেট : বর্তমানে টকটাইম ও ইন্টারনেট সেবার ওপর আরো পাঁচ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এতে মুঠোফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়বে।
পানির ফিল্টার : দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারের দাম বাড়তে পারে।
কাজুবাদাম : দেশে কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসাবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।
এসি : গরমে আরাম পেতে অনেকে এয়ারকন্ডিশন বা এসি কিনছে। আগামী বাজেটে এসিকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কমেপ্রসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসির দাম বাড়তে পারে।
ফ্রিজ : আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। যা আর বৃদ্ধি করা হবে না। ফলে নতুন অর্থবছরে পাঁচ শতাংশ ভ্যাটের হার বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
গাড়ি : বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি রোধে হাইব্রিড ও নন হাইব্রিড টাইপের গাড়ি ছাড় করতে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত যোগ করা হয়েছে। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস : কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর আরো দুই শতাংশ বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সন : গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।
জেনারেটর : জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তাই দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে।
মূলধনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ : অর্ধশত মূলধনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের রেয়াতি সুবিধা (শূন্য শুল্কে আমদানি) প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশে ব্যবহার্য অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
দাম কমবে যেসব পণ্যের
কিছু পণ্যে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট কমানো হয়েছে। ফলে দাম কমবে এসব পণ্যের।
গুঁড়াদুধ : প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে আমদানিকৃত গুঁড়াদুধের দাম কমতে পারে।
চকোলেট : চকোলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে সব বয়সীদের পছন্দের চকোলেটের দাম কমতে পারে।
উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ : এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন ও প্রপেলার আমদানি পর্যায়ে কমতে পারে মূসক। ফলে উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে কমতে পারে খরচ।
৩০টি নিত্যপণ্য : নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০টি পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, মোটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্য তেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০টি পণ্য। ফলে কমতে পারে এসব পণ্যের দাম।
ল্যাপটপ : ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হলেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০.৫০ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে বিধায় ল্যাপটপের দাম কমতে পারে।
কার্পেট : কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে পারে।
রড, বার ও অ্যাঙ্গেল : পাশাপাশি রড, বার ও অ্যাঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে লোহাজাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।
সুইস-সকেট : বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সুইস-সকেটের দাম কমতে পারে। কারণ দেশে ৎপাদিত সুইস-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে।
ইলেকট্রিক মোটর : ইলেকট্রিক মোটর উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ইলেকট্রিক মোটরের দাম কমতে পারে। এ ছাড়া দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টস আমদানির শুল্ক কমানো হচ্ছে। এ কারণে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।
কিডনি ডায়ালিসিস : কিডনি ডায়ালিসিসে ব্যবহৃত ফিল্টার ও সার্কিট আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে ডায়ালিসিস খরচ কমতে পারে।
ডেঙ্গু কিট : ডেঙ্গু কিটের আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়ায় কমতে পারে এই স্বাস্থ্য উপকরণটির দাম।
ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ : ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সুলভ করতে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধার আওতায় নতুন কিছু কাঁচামাল যোগ হচ্ছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ কমে আসবে।
স্বাআলো/এস/বি