রংপুর বিভাগ

নিম্নমানের সামগ্রীতে সড়ক নির্মাণ, একদিনেই ভাঙছে দেয়াল

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট | July 12, 2025

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। কাজের মান এতটাই খারাপ যে, একদিন পরেই খুলে পড়ছে প্লাসাইটিংয়ের ইটের গাথুনী। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত নির্দেশনার পরও কর্ণপাত করছে না নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে সরকারের ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভেলাবাড়ি বাজার জিসি থেকে দুর্গাপুর জিসি পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ কিলো ২২৫ মিটার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা এবং চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। এটি সংস্কারের জন্য এলজিইডি একটি প্রকল্প হাতে নেয় এবং এর বিপরীতে ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় বগুড়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ১৭ মার্চে চুক্তি হওয়া এই কাজটি আগামী আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি রয়েছে। ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে ঠিকাদারকে কিছু অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরুর প্রথম থেকেই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে। স্থানীয়রা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা আদিতমারী এলজিইডি বারংবার বাধা দিলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তা আমলে নেয়নি। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে খোদ জেলা প্রশাসনও কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। মুখের কথায় কাজ না হওয়ায় গত ২২ এপ্রিল উপজেলা প্রকৌশলী কাজের তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলার এবং কাজের গুণগত মান ভালো করার তাগিদ দিয়ে লিখিত চিঠি পাঠান। কিন্তু এতেও কোনো ফল হয়নি এবং এলজিইডি কার্যত নিরুপায় হয়ে পড়েছে।

সড়কটির মোট ৬টি পুকুর পাড়ে প্লাসাইটিংয়ের কাজ ধরা হয়েছে, যেখানে এক নম্বর ইট দিয়ে গাথুনির ওয়াল করার কথা। কিন্তু সেখানে নিম্নমানের ইট ও নামমাত্র মশলা (সিমেন্ট ও বালুর অনুপাতে বড় ধরনের গড়মিল) দিয়ে গাথুনি করা হয়েছে। যার ফলে গাথুনি শেষ হওয়ার পরদিনই তা ভেঙে পড়ছে। এটা দেখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে সেই গাথুনি ভেঙে নতুন করে দেয়াল করা হলেও পুনরায় ভেঙে পড়া নিম্নমানের ইটই ব্যবহার করা হয়। এমন খবর পেয়ে প্রকল্পের সুপারভাইজার উপ সহকারী প্রকৌশলী (এসও) পারভেজ রুবেল মুঠোফোনে ওই নির্দিষ্ট প্লাসাইটিংয়ের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

স্থানীয় পথচারী জুয়েল জানান, সিমেন্ট নেই বললেই চলে, শুধু বালু দিয়ে কোনো রকমে ইটের জয়েন্ট দেয়া হচ্ছে। গাথুনি শেষ হলেই দ্রুত মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে, যাতে নিম্নমানের কাজ সহজে বোঝা না যায়। কোনো কোনো দিন রাতেও কাজ করে শ্রমিকরা। তার মতে, পুরো কাজটিই দায়সারা গোছের করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় ঠিকাদার জানান, কাজটি বগুড়ার ঠিকাদার পেলেও তা বেশি কমিশনের বিনিময়ে এ জেলার তিনজনের একটি প্রভাবশালী মহলের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই লোকসানের ভয়ে তারা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দাবি করা এক ব্যক্তি বলেন, কিছু নিম্নমানের ইট ভুলবশত শ্রমিকরা ব্যবহার করেছিল। পরে সেই দেয়াল ভেঙে নতুন করে গাথুনি দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের হলেও পূর্বের ইটে সিমেন্ট বালু লাগার কারণে তা ভাটা ফেরত নিবে না, তাই সেসব ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যেসব অব্যবহৃত নিম্নমানের ইট ছিল, তা সরিয়ে ভালো ইট আনা হচ্ছে এবং শ্রমিকদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

প্রকল্পটির সুপারভাইজার উপ সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ রুবেল জানান, নিম্নমানের ইটের ভেঙে পড়া ওয়াল পুনরায় গাথুনিতে পূর্বের ইট ব্যবহার করার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্লাসাইটিংয়ের কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বাকী প্লাসাইটিংয়ের কাজ কিছুটা সন্তোষজনক হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক বলেন, শুরু থেকেই এ প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অনেকবার মৌখিক ও একবার লিখিতভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। দ্বিতীয় দফায় পত্র পাঠানো হচ্ছে। এ প্রকল্প নিয়ে জেলা প্রশাসনও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তিনি জানান, তারা বিধিমত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

স্বাআলো/এস

Shadhin Alo