চুয়াডাঙ্গায় ডাকাতিসহ ছয় মাসে ১৪ হত্যা, ২০ ধর্ষণ

চুয়াডাঙ্গায় গত ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে জনগণের মাঝে উদ্বেগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ড এবং ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর নিয়মিত পুলিশি অভিযান চলছে ও আটকের সংখ্যাও বাড়ছে। তারপরও চুরি-ছিনতাই থেমে নেই।

স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই সময়কালে অন্তত ছয়টি ডাকাতি, ২৯টি চুরি, ১৪টি হত্যাকাণ্ড এবং ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭৭টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু ঘটনার এরইমধ্যে আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তবে কিছু ঘটনা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের জগন্নাথপুর শ্রীরামপুর সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রাস্তায় গাছ ফেলে বোমা বিস্ফোরণ করে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় কুষ্টিয়াগামী ও আলমডাঙ্গাগামী ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স এমনকি মরদেহবাহী গাড়িকেও রাস্তায় থামিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এর চারদিন পর জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। ওই সময় ডাকাত দলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি রামদা ও ডাকাতির নগদ দেড় হাজার টাকা।

এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সড়কে খেজুরগাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রলি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অস্ত্রের মুখে যানবাহন থেকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে তখন। ওই ঘটনায় পথচারীদের কুপিয়ে জখম ও মারধর করে ডাকাত দলের সদস্যরা। মামলা হলে জীবননগর থানা পুলিশ একজনকে আটক করে। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার মর্তুজাপুরে এমইপি ইটভাটার ফার্মে নাইটগার্ডকে ঘুমন্ত অবস্থায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তাকে হাত-পা বেঁধে রেখে বেদম মারধর করে ডাকাত দল। পরে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ৪টি গরু ও ৪টি ছাগল নিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পড়ে তারা। এই ঘটনায় ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ।

সবশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের আলমডাঙ্গার কুলপালা এলাকায় দুই ট্রলি চালকের কাছ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লুট করে নেয় ডাকাত দল। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া, গত বছরের ১০ অক্টোবর আলমডাঙ্গার আটকপাট, ১ ডিসেম্বর দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের রামনাগরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

শুধু ডাকাতিই নয়, সমানতালে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ৬ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে দামুড়হুদায় দর্শনা থানার হরিশচন্দ্রপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কে প্রতিবন্ধী স্কুলের অদূরে এক নবদম্পতি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এসময় স্বামী সাগরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে স্ত্রীর গহনা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানা হেফাজতে নেয়। মামলা হওয়ার একদিন পর চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামিদের কাছ থেকে লুট করা মালামাল এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি হাসুয়া উদ্ধার করা হয়।

বেড়েছে চুরির ঘটনাও। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সকালে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে শহরের নাফি টেলিকম নামে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে। নগদ টাকা ও নতুন মোবাইল ফোনসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকা চুরি গেছে বলে দাবি করেন দোকান মালিক। এ ঘটনার এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেনকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ২০ অক্টোবর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়ার গ্রামে গৃহবধূ অঞ্জলি রাণীকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করে। ২৬ অক্টোবর দুপুরে জীবননগর মেদেনীপুর গ্রামের একটি বিলের ভেতর থেকে শিক্ষক সুজন আলির কঙ্কাল উদ্ধার হয়। ওই বছরেরই ১৩ নভেম্বর আলমডাঙ্গার ফরিদপুর এলাকা থেকে পুরাতন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী তুষার আহমেদ সবুজকে হত্যার পর মোটরসাইকেলসহ আগুনে পোড়ানো হয়, ১২ নভেম্বর আসাননগরে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা পলি খাতুনকে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করে, ১৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের একটি মেহগুনি বাগান থেকে তরুণী খালেদা আক্তার মুন্নির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়া চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের মাঠের ভুট্টাক্ষেতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মারুফ সরোয়ার বাবু জানান, পুলিশের কিছু সমস্যা থাকার কারণে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস জানান, পুলিশ কঠোর নজরদারি এবং তৎপরতার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা দ্রুত উদঘাটন করছে। অপরাধীদের গ্রেফতারেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ আটক করা হচ্ছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো।

স্বাআলো/এস

Share post:

Subscribe

Popular

আপনার জন্য
Related

এবার জনপ্রতি ফিতরা সর্বনিম্ন ১১০ টাকা

এ বছর বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা...

যশোরে ট্রাকচাপায় যুবক নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের কোতোয়ালি থানার উপশহর বি ব্লকের বাসিন্দা...

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার...

সরকারি হলো খুলনার একটিসহ আরো ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

নতুন করে দেশের আরো তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা...