মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় মধুমতী নদীর যেখানে সেখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে অবাধে। চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। তবে প্রশাসন বলছে, অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন তারা।
উপজেলার শিরগ্রাম খেয়াঘাট, পাল্লা খেয়াঘাট, কাশিপুর, বাবুখালী, হরিনাডাঙ্গা, রায়পুর, দাতিয়াদহ, হরেকৃষ্ণপুর, চরঝামা, চরপাচুড়িয়া, কালিশংকরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। যে কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ, ফসলি জমি ও নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি চক্র। ওই চক্রের নেতৃত্ব দেন হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মাসুদ রানা ও বাউজানি গ্রামের ওবায়দুর।
মধুমতী নদীর চরপাচুড়িয়া এলাকা থেকে একসঙ্গে ১০-১২টি অবৈধ ট্রলিতে বালু কাটছেন শ্রমিকেরা।
একজন বালু কাটার শ্রমিক বলেন, আমরা দিন হাজিরাতে কাছ করি। মাসুদ ভাই আমাদেরকে প্রতিদিন ৫০০ করে টাকা দেয়। আমরা তার হয়ে কাজ করি।
চর ইজারা নেয়া কী না জানতে চাইলে সেলিম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০০ ছোট ট্রাকে বালু পরিবহন করা হয়। মধুমতী নদীর প্রায় ২০ পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। প্রতি ট্রাকে গড়ে ২০০ ঘনফুট বালু ধরে। এক ট্রাক বালু বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ টাকার বালু বিক্রি করছেন এসব প্রভাবশালীরা। বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। অথচ সরকার বঞ্চিত হচ্ছেন মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে।
নদীপাড়ের বাসিন্দা চরপাচুড়িয়া গ্রামের লতিফ শেখ বলেন, যেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে সেই জায়গায় আবার ফেলছে এতে নদী ভাঙ্গন ব্যাপক আকার ধারণ করছে এবং বাঁধ, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে। আমাদের ঘরবাড়ি সব নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, এজাজুল করিম ও ইউনুস মোল্লা বলেন, আমরা কিছু বলতে গেলে মাসুদ রানা ও তার লোকজন হুমকি-ধমকি দেয়। ইউএনও অফিস ও এসিল্যান্ডের অফিসের ভয় দেখায়। এমন কী গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযুক্ত হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মাসুদ রানা ও বাউজানি গ্রামের ওবায়দুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে একজনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে অন্যজন ফোন রিসিভ করেননি।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ মণ্ডল বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। অফিস থেকে কাউকে নদী থেকে বালু কাটতে লিখিত বা মৌখিক কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।
স্বাআলো/এস