বছর ঘুরে রমজানের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র শবেবরাত। আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পবিত্র শবেবরাত পালিত হবে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বড় অংশ এ রাতকে মহিমান্বিত রজনী হিসেবে পালন করেন।
ফার্সি শব্দগুচ্ছ ‘শবেবরাত’ অর্থ ভাগ্যরজনী। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবেবরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এই রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনেকে বিশ্বাস, শবেবরাতের রাতে রয়েছে পাপ মোচনের সুযোগ। নির্ধারিত হয় পরবর্তী বছরের হায়াত, রিজিক ও আমল। তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, মিলাদ মাহফিল, নফল নামাজ আদায় ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন শবেবরাতে। মৃত স্বজনের কবর জিয়ারত করেন।
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুুটি থাকবে।
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সৌভাগ্যময় রজনী মানবজাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদান ও প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।
পবিত্র এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, এই মহিমাময় রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফিরাত। পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।
এ শবেবরাতের রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
পবিত্র শবেবরাত, ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও হামদ নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
ইফা আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
রাত ৭টা ১০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান।
রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. খলিলুর রহমান মাদানি।
রাত সাড়ে ৯টায় পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি।
রাত সোয়া ২টায় (দিবাগত রাত) নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে ওয়াজ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান
এ ছাড়া ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
শবেবরাতের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন।
স্বাআলো/এস