জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ব্যাপক বোমাবর্ষণের কারণে গাজা উপত্যকা এখন ‘শিশুদের কবরস্থান’এ পরিণত হয়েছে। সেখানে এমন পরিস্থিতির কারণে তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছেন। খবর এএফপি’র।
সোমবার (৬ নভেম্বর) নিউইউর্কে জাতিসংঘ সদরদফতরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতির কারণে প্রতি ঘণ্টায় মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলকে এই অমানবিক ভোগান্তি বন্ধ করতে এবং গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গাজার দুঃস্বপ্ন একটি মানবিক সংকটের চেয়েও বেশি। এটি একটি মানবতার সংকট।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং বিভিন্ন ঘরবাড়িতে চালানো হামাসের ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ১৪শ’ নিহত হয়েছে। হামাসের হামলায় নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাসের হামলার প্রথম দিনে তাদের নির্বিচারে গুলি করে ও পুড়িয়ে মারার এবং ২৩০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করার পর ইসরায়েল গাজা অবরোধ করে এবং সেখানে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়।
গাজায় হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১০,২০০ ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এদের প্রায় অর্ধেক নারী ও শিশু।
সেখানে ইসরাইয়েলি বাহিনীর হামলায় হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে এবং ১৫ লাখের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গণমাধ্যম কর্মীদের হত্যার জন্য গুতেরেস দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকদের সুরক্ষার দেয়ার বিষয়ে গঠিত নিউইয়র্ক ভিত্তিক ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’র (সিপিজে) মতে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ে কমপক্ষে ৩৬ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছে।
গুতেরেস বলেন, বিদ্যুৎ ও অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া ইনকিউবেটরে থাকা শিশু এবং লাইফ সার্পোটে থাকা রোগীরা মারা যাচ্ছে। গাজায় এখন এমন ঘটনাই ঘটছে।
তিনি বলেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে এখনি মানবিক যুদ্ধবিরতি পালন করা জরুরি। এক্ষেত্রে সকল পক্ষের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গুতেরেস আবারো বলেন, আমরা গাজায় আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন প্রত্যক্ষ করছি।
এদিকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সকল পক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভুমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
সৌদি আরবের জেদ্দায় এখানে ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এ আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পক্ষে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির জন্য তাদের মুসলিম নারীদের আওয়াজ শুনতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরাইলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এ নৃশংসতা, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার দুই লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
স্বাআলো/এসএ